News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২

তফসিল ঘোষণায় চূড়ান্ত নির্বাচনী মাঠে বিএনপির প্রার্থীরা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম তফসিল ঘোষণায় চূড়ান্ত নির্বাচনী মাঠে বিএনপির প্রার্থীরা

তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখন পুরোপুরি আনুষ্ঠানিকতার পথে। রাজনীতির মাঠে আগে থেকেই জোর প্রস্তুতি থাকলেও নির্বাচন কমিশনের সময়সূচি ঘোষণার পর বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা আরও গুছিয়ে নেমেছেন ভোটযুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও আলোচিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এখনো ঘোষণাবিহীন। এর ফলে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ, কৌতূহল আর সমীকরণের হিসাব আরও জটিল হয়ে উঠেছে। একদিকে ঘোষণা পাওয়া চার প্রার্থীর তৎপরতা বেড়েছে, অন্যদিকে বঞ্চিত নেতাদের প্রতিবাদ ও মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাজপথও সরগরম হয়ে উঠেছে।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। পরদিন থেকে শুরু হবে যাচাই-বাছাই। আপিল ও নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে ২১ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। আর ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। ফলে সামনে সময় খুব বেশি নেই যে যার শক্তি-সমীকরণ ঠিক করতেই এখন ব্যস্ত বিএনপির নেতারা।

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পাওয়ার পরই আলোচনায় উঠে এসেছেন মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আস্থা অর্জনের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিতেও তিনি পেয়ে গেছেন বড় সমর্থন। দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী মনিরের হঠাৎ সভায় উপস্থিত হওয়া এবং দিপুর হাত তুলে সমর্থন জানানো রূপগঞ্জ বিএনপিতে যেন নতুন বাতাস বইয়ে দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই টানটান অবস্থায় থাকা রূপগঞ্জের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এই সমঝোতার পর অনেকটাই নরম হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য দীর্ঘদিনের বিভক্তি কাটিয়ে এবার হয়তো ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে পারবে বিএনপি। দিপুও জানিয়েছেন “রূপগঞ্জের জয় আমাদের সবার। মনির ভাই আমার অনুপ্রেরণা।”

নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনীত নজরুল ইসলাম আজাদ। মনোনয়ন বঞ্চিত মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর ও কেন্দ্রীয় নেত্রী পারভীন আক্তারের একত্র মঞ্চে আজাদের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়ে করেছেন বিক্ষোভ মিছিল। ফলে আজাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিজ দলের ‘বিক্ষুব্ধদের’ সামাল দেওয়া।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মনোনীত আজহারুল ইসলাম মান্নান দ্রুতই সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতা চেয়েছেন। সাবেক এমপি রেজাউল করিম, সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিনসহ বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ করায় মাঠে এক ধরনের ইতিবাচক সাড়া মিললেও অন্যদিকে তার কিছু বক্তব্যকে ঘিরে হয়েছে মশাল মিছিল ও প্রতিবাদ। সমর্থকদের এক অংশ তাকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত হলেও ভিন্ন অংশের ক্ষোভ সামলানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ মান্নানের সামনে। তবুও তিনি আশাবাদী সিনিয়রদের সহযোগিতা পেলে মাঠে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরে আসবে।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার পর নতুন মুখ মাসুদুজ্জামান মাসুদকে ঘিরে প্রথমদিকে নানা প্রশ্ন ওঠে। ওসমান পরিবারের সঙ্গে তার সখ্যতা নিয়ে দলীয় মহলে সন্দেহ তৈরি হলেও তিনি টানা দুই দিন প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি বদলে দিয়েছেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ খান টিপু এবং যুবদল নেতা খোরশেদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি পেয়েছেন আশ্বাস। যদিও বাবুল ও আবুল কালাম এখনো বিরোধিতার অবস্থানে তবুও মনোনয়ন বাতিলের সম্ভাবনা কমে যাওয়ায় মাসুদের অবস্থান শক্ত হয়েছে বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

জেলার অন্য চারটি আসনের প্রার্থী ঘোষণা হলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ এখনো ‘অপেক্ষার ঘরে’। বিএনপি কি জোটগত সমীকরণে যাবে, নাকি শেষ মুহূর্তে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবে এই প্রশ্নে সরগরম স্থানীয় রাজনীতি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সকলেই মাঠে সক্রিয়, গণসংযোগ থেকে শুরু করে সভাত্ম সবই চলছে পূর্ণ দমে। ঘোষণা না হওয়ায় এ আসনে উত্তাপ আরও বাড়ছে, এবং জেলাজুড়ে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই আসনটি।

তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির রাজনীতি এখন দুই ফ্রন্টে একদিকে নির্বাচনী প্রস্তুতি, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ সমীকরণ। মনোনীত প্রার্থীরা সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছেন, আবার মনোনয়নবঞ্চিতরা নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে মাঠে। আর নারায়ণগঞ্জের সাধারণ ভোটাররা দেখছেন কে কতটা শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজনৈতিক অঙ্গনে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন এবং সমঝোতার রাজনীতিও ততই বাড়ছে গুরুত্বে।

Ad Placement 1
Ad Placement 2
Islam's Group