News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

খেজুর গাছে এত ভয় কেন?


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১০:২৭ পিএম খেজুর গাছে এত ভয় কেন?

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আগে থেকেই আলোচনায় রয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। কিন্তু তিনি নিজ দলীয় প্রতীক খেজুর গাছে নির্বাচন করতে চান না। বরং বিএনপি দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করতে চান বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। নিজ দলীয় প্রতীক খেজুর গাছে কেন এত ভয় তা নিয়েই সর্বস্তরে আলোচনা চলমান রয়েছে।

অথচ মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর অনুসারীরা নিজেদেরকে অনেক জনপ্রিয় মনে করে থাকেন। তিনি নির্বাচনে মাঠে লড়াই করে যে কোনো প্রার্থীকে হারিয়ে দিতে পারবেন বলে নিজেকে মনে করে থাকেন। কিন্তু আবার নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে চান না। বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের জন্য উতলা হয়ে রয়েছেন। প্রয়োজনে বিএনপিতে যোগ দিতেও রাজী আছেন বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যায়।

জানা যায়, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান। তার যেন নিজ দলীয় প্রতিকে আস্থা নেই। সেই সাথে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের উপড়ও তার আস্থা নেই। তিনি বিএনপির ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের ভোটগুলো নিজের করে নিতে চান। এজন্যই বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গ পাওয়ার জন্য নানারকম কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

সবশেষ গত ১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে কাসেমী পরিষদ আয়োজিত ‘আজমাতে সাহাবা’ নামে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন তিনি নিজেই। আজমতে সাহাবা নামে সমাবেশের আয়োজন করা হলেও বিএনপির নেতাদেরই আধিক্য ছিলো বেশি। জমিয়ত নেতাদের চাইতে বিএনপির নেতার্মীদের উপস্থিতিই ছিলো বেশি। মঞ্চ ছিলো বিএনপির নেতাদের দ্বারা পরিপূর্ণ।

এর আগে ২৩ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঢাকার তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

সংশোধিত আরপিওর নানা দিক তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, যদি নির্বাচনী জোট হয়, তাহলে জোটের অংশ হলেও দলের যে প্রতীক, তা দিয়ে নির্বাচন করতে হবে।

আর এটা বলবৎ থাকলে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে নিজ দলীয় প্রতিক খেজুরগাছ নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। আর খেজুরগাছ নিয়ে নির্বাচন করলে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে। বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের নূন্যতম সমর্থন পাবেন না। ফলে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকলেও শেষ পর্যন্ত যেন তার সংসদ সদস্য পদ অধরাই থেকে যাবে। তার সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হবে না।

এদিকে তার বিপরীতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ও বিএনপি নেতা মোহম্মদ শাহ আলম স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনী মাঠে আবির্ভাব হতে পারেন। তাদের দুইজনের একজন মাঠে থাকার থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে এমনটাই উপলব্দি করা যাচ্ছে। তারা যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে নারাজ মনির কাসেমীকে। আর যদি তাদের দুইজনের একজন নির্বাচনী মাঠে ভোটের লড়াইয়ে নেমে গেলে লড়াইয়ে টিকে থাকা মনির হোসাইন কাসেমীর একেবারেই অসম্ভব হয়ে যাবে।

সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে তেমন একটা নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হতে হয়নি।

এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। এই অবস্থায় বিএনপি সহ অনেক রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের জানান দিতে থাকেন।

তারই অংশ হিসেবে বিএনপির শরীক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীও বিভিন্ন সভা সমাবেশের মধ্য সরব হতে থাকেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এলাকায় একের পর এক সমাবেশ করে বেড়ান। আর প্রত্যেকটি সভা সমাবেশেই নিজেকে বিএনপি প্রেমিক হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। কোনো কোনো বক্তব্যে নিজের দলের থেকে বিএনপিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শুরু থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ সংসদীয় এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরাসহ প্রায় সকলেই নিশ্চিত ছিলেন এই আসনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপির প্রার্থীকেই ধানের শীষের প্রতিক দেয়া হবে। কিন্তু চূড়ান্ত বাছাই পর্বে হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসেন জমিয়ত উলামার মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মনির হোসাইন কাশেমী। সেই সাথে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে দিনভর নানা জল্পনার পর বিকেলে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় ধানের শীষের মনোনয়ন পত্র।

অথচ তার বিরুদ্ধে ছিলো তৎকালিন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্যের সাথে আঁতাতের অভিযোগ। মূলত স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের সমর্থনেই তার বেড়ে উঠা এবং একই সাথে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ারও ইচ্ছা পোষণ করেন। এমনকি বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাসহ অনেকেই তাকে চিনতেনই না।

বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছিলো-বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামা হলেও জমিয়ত নেতা মনির হোসাইন কাসেমীকে কেউই চিনতো না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শুরুতেও তার কোন আলাপ আলোচনাই ছিল না। সংসদীয় এলাকাতেও তার তেমন একটা পরিচিত নেই। অনেকের কাছেই তিনি অপরিচিত। তারপরেও তাকে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়।

কিন্তু এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে পরামর্শ না করেই মনির হোসাইন কাসেমীকেই ২০ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়। জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতিক পাওয়ার পরেও জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে তিনি কোন যোগাযোগ করেনি। এর আগেও তিনি যোগাযোগ করেনি। ফলে ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও মনির হোসাইন কাসের্মীকে প্রায় অনেকটাই বয়কট করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মী।

কিন্তু এবারও সেই মনির হোসাইন কাসেমী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরব হয়েছেন। সেই সাথে যে কোনোভাবেই মনোনয়ন বাগিয়ে আনার চেষ্টায় রয়েছেন। একই সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের মন জয় করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহ বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রশংসা করে বেড়াচ্ছেন।

অথচ সারাবছরজুড়েই তিনি ছিলেন লাপাত্তা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এলাকায় তার কোনো খবরই ছিলেন না। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি নেতাকর্মী বিমুখ ছিলেন। নিজ দলীয় হোক কিংবা বিএনপি দলীয় হোক কারও সাথেই তার তেমন যোগাযোগ ছিলো না।

Islam's Group