নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে মনোনয়ন বঞ্চিত ৫ প্রার্থী। মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে চার কর্মসূচী পালন করে নিজেদের জাগান দিয়েছেন প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকলের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের বিজয়ী করার ঘোষণা দিয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক এমপি আবুল কালাম, সাখাওয়াত হোসেন খান, আবু আল ইউসুফ খান টিপু, আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল ও আবুল কাউসার আশা।
৩ নভেম্বর বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় ঘোষণা করা হয় শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদকে। ১১ দিনের ব্যবধানে মাসুদুজ্জামান মাসুদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন মনোনয়ন বঞ্চিতরা। দলের নতুন মুখ হয়েই বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হওয়া নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে ও তৃনমূল নেতাকর্মীদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে এক টেবিলে ৫ প্রার্থী প্রাথমিক ঘোষিত মনোনীত প্রার্থীকে পরিবর্তনের দাবিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আহবান জানিয়েছেন।
গত ১৫ নভেম্বর নারায়গঞ্জ ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যদ্ধ মহানগর বিএনপি ঘোষনা দেন মনোনয়ন বঞ্চিত ৫ প্রার্থী। ১৭ নভেম্বর আওয়ামীলীগের শাটডাউনের প্রতিবাদে মনোনয়ন বঞ্চিতদের নিয়ে মহানগর বিএনপি বিশাল মিছিলে ঐক্যবদ্ধ দেখা দেয় নেতাদের মধ্যে। ১৯ নভেম্বর শহরে লিফলেট বিতরণ ও ২০ নভেম্বর তারেক রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদে উপস্থিত ছিলেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা।
জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের প্রার্থীতা বাতিলের দাবিতে এবার এক টেবিলে বসেন ৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা সংবাদ সম্মেলন করেন।
ওই সময়ে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছি। আগামী নির্বাচন হবে অনেক কঠিন। বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তৃণমূল সহ অনেকেই নির্যাতিত। এসব তৃণমূলকে মূল্যায়িত করা না হলে রাজনীতি কঠিন পর্যায়ে চলে যাবে। পরীক্ষিত প্রার্থী না হলে এখানে জয় পাওয়াটা কষ্টকর। আবু জাফর আহমেদ বাবুল বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে যারা বিএনপির জন্য কাজ করেছেন তাদের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এমন একজনকে দেওয়া হয়েছে যাকে কেউ চিনে না। তিনি অপরিচিত। এ আসনের মানুষ অপরিচিত মানুষকে ভোট দিবে না। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, যাকে বিএনপির মনোনীত ঘোষণা করা হয়েছে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে ছিলেন না। তার নাম ঘোষণার পর তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। সকলে ক্ষুব্ধ। যেখানেই যাচ্ছি সকলে বলছেন এ প্রার্থীকে তো আমরা চিনি না। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, আমরা দলের নীতি নির্ধারকের কাছে হাতজোড় করে বলছি আপনারা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ও বিএনপিকে বাঁচান। আমরা চাই দলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হোক।
তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত এমপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, দল আমার ওপর আস্থা রেখে এবং যাচাই বাছাই করেই মনোনয়ন দিয়েছে। আমি দলের দিকে তাকিয়ে আছি। দলই আমার বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিবে। তারা তাদের মতামত জানিয়েছে। তাদের সবার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আমি সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চাই।
অন্যদিকে ১৭ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউনের প্রতিবাদে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে দলের নেতাকর্মীরা শহরজুড়ে মিছিল ও পথসভা করেন মহানগর বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়ায় হোসিয়ারি সমিতির সামনে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে পথসভা শুরু হয়। পরে মিছিলটি মিশনপাড়া থেকে শুরু হয়ে শহরের চাষাড়া, কালির বাজার, ২ নম্বর গেইট, ডিআইটি, মণ্ডলপাড়া সেতু এলাকা প্রদক্ষিণ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে গিয়ে শেষ হয়।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আওয়ামী লীগ নৈরাজ্যের রাজনীতি করেছে; তাদের নৈরাজ্য জনগণ আগেও প্রতিহত করেছে। আবার করার চেষ্টা করলে তাও প্রতিহত হবে। মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরে যদি কোনো আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা জনগণের জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তা কোনভাবেই সহ্য করা হবে না। এছাড়া বিএনপি নেতা আবু জাফর আহমেদ বাবুল বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিএনপি সমস্ত মতপার্থক্য পেছনে ফেলে আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলেন, জনগণ ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিচার দেখতে চায় এবং এর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না। পথসভায় মহানগর বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে আছেন আবুল কাওসার আশা, মনির খান, রেজা রিপন, আক্তার হোসেন খোকন শাহ, সেলিম, সোহেল, রুবেল প্রমুখ।
অপরদিকে গত ১৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরে ৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপি গণসংযোগ করে মহানগর বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা নেতৃত্বে তাদের অনুসারীরা মিছিলে অংশ নেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। নারায়ণগঞ্জের সকল মানুষ ও ভোটাররা ঐক্যবদ্ধ। আমরা সকলে মিলে তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করবো। আমরা সকলে মিলে ধানের শীষকে বিজয়ী করবো। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপির পক্ষ থেকে এই ৩১ দফা তুলে ধরা হয়েছে। এই ৩১ দফা এই জাতির মুক্তির সনদ। এই ৩১ দফা বাস্তবায়নে আমরা যার যার অবস্থান থেকে এত বছর যাবৎ কাজ করে যাচ্ছিলাম। এই ৩১ দফায় সব আছে। বিএনপির ক্ষমতায় এলে আমরা এই ৩১ দফার আলোকে সংস্কার বাস্তবায়ন করবো।
এদিকে ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আয়োজনে তারেক রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মিলাদ ও আলোচনা সভা করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল সহ মহানগর থানা উপজেলা নেতা-কর্মীরা।








































আপনার মতামত লিখুন :