ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নারায়ণগঞ্জে চালকের আসনে অবতীর্ণ হোন বিএনপি নেতারা। এরপর বিএনপির প্রায় সকল নেতাই কম বেশি বিতর্কে জড়িয়েছেন। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধুমাত্র মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। গত প্রায় দেড় বছর সময় ধরে তিনি নিজেকে এবং নিজের অনুসারীদের আগলে রেখে ছিলেন সমালোচনার ঊর্ধ্বে। নীরবে চালিয়ে গিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি। ওয়ার্কিং ফর বেটার নারায়ণগঞ্জ সংগঠনের ব্যানারে করেছেন জনকল্যাণ ও জনসেবামূলক কর্মকান্ড। তবে রাজনৈতিক ভাবে হতাশ ছিলেন তার অনুসারীরা। খোরশেদ নিজে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বড় কোন শোডাউন না দিলেও তার অনুসারীদের নিয়ে মিছিল পূর্ন করে বড় বড় শোডাউন দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অনেক উল্লেখ যোগ্য নেতারা।
তবে এবার আশার আলো দেখছেন খোরশেদ অনুসারীরা। আসন্ন নির্বাচনে নিজেকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে ৩১ দফার প্রচারণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী মাঠে সরব হয়েছিলেন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এর মধ্যে ৩ নভেম্বর বিএনপি থেকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদকে মনোনীত করা হয়। আর ১৩ নভেম্বর মাসুদুজ্জামান মাসুদ সাবেক জনপ্রিয় কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনে তার সহযোগিতা কামনা করেন। এরপর থেকে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ পুরোদমে মাসুদুজ্জামানের হয়ে কাজ করতে মাঠে নেমে পড়েন। এর মধ্যে ঘটে বিপত্তি। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আলাদা করে ঐক্যমঞ্চ তৈরি করেন। যেখানে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, ও মহানগর বিএনপি নেতা আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেন। তারা বলেন মাসুদুজ্জামানের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির ধ্বংস ঘটবে। তাই বিএনপিক বাচাতে এই মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি রাখেন। ওই ঐক্যমঞ্চে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকেও রাখার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই তিনি মাসুদুজ্জামানের পক্ষে মাঠে নেমে পড়ায় তাকে আর রাখা হয়নি। সেই সময়টাতে অনেকেই মনে করেছিলো মনোনয়ন বঞ্চিতদের এই ঐক্য পুরো খেলাটা পাল্টে দিতে সক্ষম হবে। আর এর মধ্য দিয়ে খোরশেদ নিজের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়বেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে যে মনোনয়ন বঞ্চিতদের অন্যতম নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু রাতারাতি নিজের ভোল পাল্টে মাসুদুজ্জামানের সাথে ভিড়ে যান, নিজেই নিজেকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বলে ঘোষণা করেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে ভাটা পড়ে মনোনয়ন বঞ্চিতদের ঐক্যের কার্যক্রমে। ফলে তাদের এই প্রতিবাদ আর বেশি দূর আগাতে পারেনি। তবে ধীরে ধীরে মাসুদুজ্জামানের কাছে খোরশেদের গ্রহণ যোগ্যতা আর রাজনৈতিক প্রভাব বাড়তে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে মাসুদুজ্জামান খোরশেদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে শুরু করেছে।
এতে করে খোরশেদের অনুসারীরা নতুন করে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।
তাদের মতে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বিএনপির মধ্যে একজন জনপ্রিয় নেতা। তার বিরুদ্ধে তেমন কোন বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ নেই। চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি সহ অন্যান্য যেসব অভিযোগ অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে উঠে থাকে এমন কোনোটাই নেই খোরশেদের বিরুদ্ধে। সেই সাথে তিনি নিজ ওয়ার্ডে ব্যাপক জনপ্রিয়তার পাশাপাশি করোনাকালীন সময় তার কাজে বিশ্ব ব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন। জেলা জুড়ে খোরশেদের আলাদা কদর রযেছে। কিন্তু তার বড় ভাই তৈমুর আলম খন্দকারের কারণে খোরশেদকে রাজনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। সেই সময়টি এখন তিনি কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে খোরশেদকে আবারো দল তার যোগ্য স্থানে পৌছে দিবেন।

































আপনার মতামত লিখুন :