News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

স্বস্তিতে মনোনীত প্রার্থীরা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ১০:০৭ পিএম স্বস্তিতে মনোনীত প্রার্থীরা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নারায়ণগঞ্জজুড়ে তৈরি হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। বিএনপির প্রথম দফায় ঘোষিত ২৩৭টি আসনের তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে যেন নতুন সমীকরণের জন্ম হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থী ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে বিএনপি নিজেদের সংগঠনগত অবস্থান আরও পরিষ্কার করলেও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মানভাঙানো ও সমন্বয়ের রাজনীতিই এখন সবচেয়ে বড় আলোচ্য বিষয়।

মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই অধিকাংশ প্রার্থী নিজেরা প্রচারণা শুরু না করেও তৎপর হয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে। কারও কারও সঙ্গে গলদ দূর হয়েছে, আবার কোথাও দেখা দিয়েছে উল্টো উত্তেজনা ও ক্ষোভ। তবে সবশেষ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য “মনোনীত প্রার্থীদের বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম” চার মনোনীত নেতার জন্য যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস হয়ে এসেছে। তবে জেলার আলোচিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এখনও ঘোষণাবিহীন থাকায় এই এলাকায় কৌতূহল, জল্পনা-সমালোচনা এবং রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েছে বহুগুণ।

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। ঘোষণার পর মাত্র দুদিনের ব্যবধানে তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক জেলা বিএনপি নেতা কাজী মনিরের কর্মিসভায় উপস্থিত হওয়াই বদলে দিয়েছে পুরো পরিবেশ। রূপসীর কাজীপাড়ায় অনুষ্ঠিত সভায় সবাইকে চমকে দিয়ে দিপুর হাত উঁচিয়ে ধরেন কাজী মনিরত্ম জানিয়ে দেন নিঃশর্ত সমর্থনের কথা। উপস্থিত নেতাকর্মীদের মুখে তখন স্বস্তির হাসি। রূপগঞ্জে বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা কয়েক সপ্তাহ ধরে টানটান অবস্থায় থাকলেও দুই নেতার ঐক্যবদ্ধ উপস্থিতিতে স্থানীয় নেতৃত্বে নতুন উদ্দীপনা দেখা গেছে। দিপু বলেন, “মনির ভাই আমার পথপ্রদর্শক। রূপগঞ্জের জয় আমাদের সবার।”

নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে প্রার্থী ঘোষণা হওয়া মাত্রই চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ঐক্যের ডাক দিলেও মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের প্রতিক্রিয়া ছিল বিপরীতমুখী। দীর্ঘদিনের বিভক্ত আড়াইহাজার বিএনপি হঠাৎই এক মঞ্চে দেখা যায় মনোনয়ন বঞ্চিত কেন্দ্রীয় সহ-অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর ও কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তারকে। তারা প্রকাশ্যে আজাদের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান এবং কর্মীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বহুদিনের বিভক্ত শক্তিগুলো একত্র হওয়ায় আজাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে যদিও তার মনোনয়ন বহাল থাকার সম্ভাবনা শক্তই বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান দ্রুতই প্রতিদ্বন্দ্বী বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতা কামনা করেছেন। সাবেক এমপি রেজাউল করিম ও সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিনসহ একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলোচনা করে তিনি ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছেন। তবে নিজের কিছু মন্তব্য ও বক্তব্য ঘিরে তার বিরুদ্ধে মশাল মিছিল, মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে। ফলে মান্নানকে মনোনয়নের পর স্বস্তির পাশাপাশি মাঠে নেমেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে সংগঠনভিত্তিক চাপ।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রথমদিকে স্বস্তির জায়গায় ছিলেন না দলভুক্ত নতুন মুখ মাসুদুজ্জামান মাসুদ। ওসমান পরিবারের সঙ্গে তার সখ্যতা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন সন্দিহান। তবে গত দুই দিনে মাসুদ সরাসরি ছুটে গেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বাসায়। তিনি দেখা করেছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ খান টিপু এবং যুবদল নেতা খোরশেদের সঙ্গে। সবাই স্বস্তিদায়ক আশ্বাস দেওয়ায় তার পথ কিছুটা মসৃণ হয়েছে। যদিও বাবুল ও আবুল কালাম এখনো তার বিপরীতে অবস্থান করছেন, এরপরও মনোনয়ন বাতিলের ঝুঁকি কমে যাওয়ায় মাসুদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত হয়েছে।

এখনও প্রার্থী ঘোষণাহীন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন ঘিরে স্থানীয় জনগণসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। বিএনপি কি আবারও জোটগত সমীকরণে যাচ্ছে, নাকি শেষ মুহূর্তে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবে তা নিয়ে চলছে তীব্র কৌতূহল।

Islam's Group