News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২

ধনী জেলার গরীবি হাল


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | ফরিদ আহমেদ রবি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম ধনী জেলার গরীবি হাল

আয়তনে সবচেয়ে ছোট হয়েও নারায়ণগঞ্জ দেশের সবচেয়ে ধনী জেলা। সবচেয়ে জনবহুল, শিল্পঘন,কিছু কিছু ক্ষেত্রে একমাত্র, বৃহত্তম এমন অসংখ্য অভিধায় অভিহিত জেলাটি। জাতীয় অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখা জেলাটি দেশের সর্বোচ্চ রফতানি পণ্য নীট শিল্প সহ অসংখ্য গার্মেন্টস শিল্পের কেন্দ্রভূমি। সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন, জাহাজ নির্মাণ, রড সিমেন্ট সহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়েই বিশাল কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মচারীর কর্মসংস্থানের নির্ভরযোগ্য অঞ্চলে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। অনুকূল ভৌগলিক অবস্থানের জন্য প্রাচীন কাল থেকেই শীতলক্ষ্যার উভয় পাড়ে গড়ে উঠে অসংখ্য শিল্প, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান।

নারায়ণগঞ্জ হয়ে উঠে দেশের বৃহত্তম নৌবন্দর। নৌ, সড়ক ও রেল যোগাযোগের অনন্য সমাহার জেলাটিকে দিয়েছে শিল্প বাণিজ্য কেন্দ্রের অদ্বিতীয় মর্যাদা। এমন মর্যাদা সম্পন্ন জেলাটির নাগরিক জীবন যথেষ্ট উন্নত হবে ধরেই নেওয়া যায়। বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টোটি।

নিম্ন মানের পরিষেবা এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে সবচেয়ে ধনী জেলায় বসবাসরত মানুষের নাগরিক জীবন বিভিন্ন প্রতিকূলতায় পিষ্ট। এক্ষেত্রেও জেলাটি সর্বোচ্চ অবস্থান ধরে রেখেছে তবে তা নিম্ন মানের জন্য।বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা ও পরিষেবার ক্ষেত্রে ‘ধনী জেলার গরীবি হাল’ সত্যিই বিস্ময়কর! অথচ এক সময় শিল্প বাণিজ্যে সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ ছিল দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন, আদর্শ জনপদ। শিল্পায়ন, আবাসন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, পরিষেবা বৃদ্ধি না পাওয়ায় বর্তমানের বেহাল অবস্থা। জেলার প্রায় পুরোটাই শিল্পাঞ্চলে পরিণত হওয়ায় গ্রামের বৈশিষ্ট্য নেই বললেই চলে। আবার পুরোটা শহরে পরিণত হয়ে নগরের সুবিধা ভোগ করছে, তাও নয়। কিছু অঞ্চল সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত, কিছু অঞ্চল ইউনিয়ন পরিষদভুক্ত। শিল্প কারখানা উভয় অংশেই বিদ্যমান থাকায় কর্মজীবী মানুষ উভয় অংশেই বসবাস করছে। বিদ্যমান আইনে যে কোন অংশে বসবাসরত নাগরিকগণ অঞ্চলভেদে তাঁদের অধিকার সংরক্ষণ করে। নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভাগ্য, প্রাপ্য অধিকারের ন্যুনতম পরিষেবাও তাদের ভাগ্যে জোটে না। গ্যাস পানির সংকট চিরস্থায়ী রূপ নিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত গ্যাস গ্রাহকদের বড় একটি অংশ বিনা গ্যাসে বিল পরিশোধে বাধ্য হচ্ছে। কিছু গ্রাহক অনিয়মিত ভাবে সামান্য গ্যাসের দেখা পেলেও তাতে রান্না বান্নার কাজ হচ্ছে না। ওয়াসার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন নেয়ার পর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পরিবর্তে হয়েছে উল্টোটি। আগে যাও কিছুটা পানির দেখা মিলতো, কিছু অঞ্চলে তাও অদৃশ্য! হয়ে গেছে! সমস্যা সমাধানে তেমন কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রধান শহর আর সাধারণ মানুষের নেই, চলে গেছে হকার, চাঁদাবাজ, দুর্বৃত্ত শ্রেণীর দখলে। মূল সড়ক ছোট বড় বৈধ অবৈধ যানবাহনের দখলে। ফুটপাত বলে কিছু আছে বলে মনে হয় না। ছোট শহরটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে কতটা সময় লাগবে তাও অনিশ্চিত। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, চুরি, রাহাজানি, ছিনতাই সহ বিভিন্ন অসামাজিক ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে নারায়ণগঞ্জ বাসী অতিষ্ঠ। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে শান্তিতে থাকার জো নেই। সন্ত্রাস সহ বিভিন্ন অনিয়ম যেন নারায়ণগঞ্জের সাথে একীভূত হয়ে গেছে। শান্তিপ্রিয় সাধারণ নারায়ণগঞ্জবাসী এমন দুর্দশা থেকে মুক্তি চায়। নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আজ পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি। তারা শুধু নিয়েই গেছে। তাইতো জাতীয় অর্থনীতির সর্বোচ্চ যোগানদার হয়েও নাগরিক অধিকারের ন্যুনতম যোগানপ্রাপ্তি শূণ্যের কোঠায়। নারায়ণগঞ্জবাসীর আশংকা জেলাটি না জানি কবে পুরোপুরি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে! এমন আশংকায় আতংকিত নারায়ণগঞ্জ বাসীকে আলোর মুখ দেখানোর কেউ কি নেই? এমন প্রশ্ন প্রতিটি নারায়ণগঞ্জবাসীর।

লেখক : বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা।

Ad Placement 1
Ad Placement 2
Islam's Group