News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২

বাস ভাড়া ও পরিবহন সেক্টর নিয়ে যাত্রী অধিকার ফোরামের নানা মত


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ০৩:১০ পিএম বাস ভাড়া ও পরিবহন সেক্টর নিয়ে যাত্রী অধিকার ফোরামের নানা মত

২৩ আগস্ট দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি স্থানীয় জেলা প্রশাসক কর্তৃক বাস ভাড়া বৃদ্ধি ও তা স্থগিত সংক্রান্ত বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবায়ক রফিউর রাব্বি। ধীমান সাহা জুয়েলেন সঞ্চালনায় সম্মেলনে ধারণা পত্র পাঠ করেন রফিউর রাব্বি।

ধারণা পত্রে বলা হয়, “আপনারা জানেন গত তিনদিন আগে নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্ধন ও উৎসব পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সাময়িক হলেও তার অবসান ঘটেছে। সারা দেশে গণপরিবহন নিয়ে এখনো এক অরাজক পরিস্থিতি বহাল রয়েছে। সরকার বদলালেও অরাজকতা দূর হয় না। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে এই অরাজকতা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে পরিবহন নিয়ে অরাজকতা দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন সেক্টরের মতো এই পরিবহন খাতটি ছিল ওসমান পরিবারের চাঁদাবাজির অন্যতম উৎস। যথেচ্ছভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করে জনগণের দুর্ভোগ তৈরিতে স্থানীয় বিআরটিএ ও প্রশাসন সবসময় তাদের সহায়তা করেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সিন্ডিকেটের মাফিয়া ও গডফাদারদের কেউ কেউ পালিয়ে যায়, কেউবা গা ঢাকা দেয়। দেশের পরিবর্তীত বাস্তবতায় যেহেতু পরিবহনে কাউকে চাঁদা দিতে হয় না, তাই আমরা বাস ভাড়া কমানোর দাবি তুলি। গত নভেম্বর মাসে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে উৎসব ও বন্ধন পরিবহনের ভাড়া ৫৫ টাকা থেকে কমিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ৫০ টাকা নির্ধারণ করেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম স্থানীয় বাস মালিকরা বাসের ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে গত সপ্তাহে একটি চিঠি দিলে জেলা প্রশাসক গত ২০ আগস্ট ২০২৫ তড়িঘড়ি করে সভা ডেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বন্ধন ও উৎসব বাসের ভাড়া ৫ টাকা বৃদ্ধি করে সবাইকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন। বিস্তর প্রতিবাদের মুখে তিনি ২২ আগস্ট তা আবার স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন।

২০ আগস্টে সভায় আমরা বলেছি, যেখানে তেল ও গ্যাসের দাম কমতির দিকে, সরকারের ভাড়া বৃদ্ধির নতুন কোন প্রজ্ঞাপন নাই সেখানে এই সময়ে ভাড়া বৃদ্ধি অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য ও গণবিরোধী। এই সিদ্ধান্ত পরিবহন সিন্ডিকেটদের উৎসাহিত করবে। কিন্তু জেলা প্রশাসক ভাড়া বৃদ্ধি করলেন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গত নভেম্বরের আন্দোলনে আমাদের আরেকটি দাবি ছিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এসি বাসের ভাড়া ৬০ টাকা নির্ধারণ করা। কিন্তু তৎকালীন জেলা প্রশাসক সে সময় তা ৭০ টাকা নির্ধারণ করেন। কিন্তু এর দুই মাসের মাথায় নারায়ণগঞ্জে একটি এসি বাস কোম্পানী ৮০ টাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস সার্ভিস চালু করে। আমরা এই ভাড়া কমানোর জন্য বর্তমান জেলা প্রশাসককে চিঠি দিলেও নিতি তা কমানোর কোন উদ্যোগ নেন নাই। উপরন্তু বাস মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধি দাবি জানানোর সাথে সাথে কাল বিলম্ব না করে ভাড়া বৃদ্ধি করে দিলেন। জেলা প্রশাসকের এ হেন উদ্যোগনেনতারা নৈতিকতা সম্পর্কে আমাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। নারায়ণগঞ্জে বিগত বিশ-পঁচিশ বছরের চিত্র লক্ষ্য করলে আমরা বলতে পারি প্রত্যেক জেলা প্রশাসকই বাস ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনগণের পক্ষ নিয়েছিলেন, কিন্তু বর্তমান জেলা প্রশাসক ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করেছেন। আমরা গত ২০ আগস্টের সভায় বলেছিলাম, কয়েক মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন। নতুন সরকার এলে অনেক ক্ষেত্রেই নতুন নিয়ম চালু হয়, আপনি আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধির উদ্যোগ বন্ধ রাখেন; আমরা এমনও বলেছি আজকে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ভেবে চিন্তে অন্যদিন সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা সিদ্ধান্ত নিয়েই সভা ডেকেছেন। তিনি কাল ক্ষেপন করতে রাজি নন। যখন প্রশাসন বা কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের এ হেন অতি-তৎপরতা পরিলক্ষিত হয় আমরা তখন এর পেছনের কারণটা বুঝতে পারি।

তবে আতি দ্রুত জেলা প্রশাসক জনগণের প্রবল আপত্তি, জনআকাক্সক্ষা ও বাস্তবতা উপলব্ধি করে ২২ আগস্ট সিদ্ধান্ত স্থগিতের যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে নারায়ণগঞ্জবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেছে। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্তটি ‘বাতিল’ বা ‘প্রত্যাহার’ করেননি, ‘স্থগিত’ করেছেন মাত্র। অর্থাৎ যে কোন সময় আবার তা কার্যকর করার পথ খোলা রেখেছেন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২ এপ্রিল ২০২৪ বিআরটিএ কর্তৃক জারিকৃত নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন রুটে ভাড়ার তালিকা সংবলিত যে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ণ জনবিরোধি এবং পরিবহন মালিক বান্ধব। আমরা লক্ষ্য করলাম, শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদ বললেও তার আমলের এই প্রজ্ঞাপনটি বাস্তবায়নের জন্য কী ভাবে প্রশাসন মরিয়া হয়ে উঠেছে।

কিন্তু ২ এপ্রিল ২০২৪ বিআরটিএর সে ত্রুটিপূর্ণ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যদি আমরা লক্ষ করি তা কার্যকরেও বাস্তবে বিস্তর অনিয়ম পরিলক্ষিত হবে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের (লিংকরোড দিয়ে) প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত অসংগতি লক্ষ্য করা যায়

১। প্রজ্ঞাপনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব সাড়ে ১৯ কিলোমিটার দেখিয়ে (২.৩২ টাকা কিলোমিটার প্রতি) ভাড়া দেখানো হয় ৪৫ টাকা, ফ্লাইওভার টোল ৫ টাকা ও সানারপাড় ইউটার্ন ৩ টাকা দেখিয়ে বলা হয় এই রুটে মোট ভাড়া হবে ৫৩ টাকা। সে শিটেই আবার বলা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ভাড়া হবে ৫৪ টাকা। কিন্তু গত নভেম্বরের আন্দোলনের পূর্বে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বাস মালিকরা ভাড়া ৫৫ টাকা করে নিলেও প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নাই।

২। প্রজ্ঞাপনে দেখানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠলে ভাড়া ৪৫ টাকা (ফ্লাইওভার ও ইউটার্ন ছাড়া), চাষাঢ়া থেকে উঠলে ৪২ টাকা, নতুন কোর্ট থেকে উঠলো ৪০ টাকা, শিবু মার্কেট ৩৭ টাকা, জালকুড়ি ৩১ টাকা ইত্যাদি। কিন্তু সব জায়গা থেকেই ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪৫ টাকা করে।

৩। প্রজ্ঞাপনে মতিঝিল শাপলা চত্বর ঘুরে দুরত্ব দেখানো হয়েছে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বন্ধন বা উৎসব পরিবহনের কোন বাসই শাপলাচত্বর ঘুরে যাতায়াত করে না।

৪। ইতোমধ্যে সরকার ডিজেলের দাম লিটার প্রতি কয়েক দফা কমালেও ভাড়া কমানোর কোন উদ্যোগ বিআরটিএ বা প্রশাসন গ্রহণ করেনি।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলার অসিত বরণ বিশ্বাস, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপু, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদের জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, গণতান্ত্রিক আইনজীবি সমিতির জেলা সম্পাদক আওলাদ হোসেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের সংগঠক বিপ্লব খান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থ, সাধারণ সম্পাদক দীনা তাজরীন, উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, সামাজিক সংগঠন সমমনার উপদেষ্টা দুলাল সাহা প্রমুখ।

Islam's Group