News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২

আলীরটেকে কাশেমীকে লাল কার্ড


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ১০:৫২ পিএম আলীরটেকে কাশেমীকে লাল কার্ড

বেশ ঘটা করেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক গিয়েছিলেন মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী। সেখানে এক সভাতে তিনি হাজির হলেও অধিকাংশ চেয়ার ছিল ফাঁকা। সামনের সারিতে এলাকার কয়েকজন থাকলেও বাকিগুলোর আসনে বসা ছিল স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। শ্রোতার চেয়ে অতিথির সংখ্যাই ছিল বেশী।

২২ আগস্ট আলীরটেকে ওই আয়োজন ছিল। উদ্দেশ্য আসছে সংসদ নির্বাচন। এ আলীরটেক আগে ছিল নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে। কিন্তু আসন পুনর্বিন্যাসের যে প্রস্তাবনা সেখানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আলীরটেককে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ কারণেই এ এলাকাতে ঢু মেরেছেন কাশেমী।

জানা গেছে, কাশেমীর এ সভাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরেই ব্যাপক প্রচারণা করে আসছিল। কিন্তু শেষতক মানুষ সেখানে সাড়া দেয়নি। যারা আয়োজক সেই হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা বিগত দিনে এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিল। সে কারণেই এবার সেখানকার জনগণ কাশেমীর সভাকে গুরুত্ব দেয়নি।

প্রসঙ্গত নারায়ণগঞ্জে বিগত দিনে ওসমান পরিবারের পক্ষে কাজ করা ও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীদের পক্ষে থেকে রীতিমত ‘ওসমানীয় হেফাজত’ রূপান্তর হয় ইসলামী সংগঠনটি। বিভিন্ন ইস্যুতে তৎকালীন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে সভা সমাবেশ ও হাত পা ভেঙে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেওয়ারও হুমকি এসেছিল। সরকারী জায়গা দখল করে নির্মিত নম পার্কের রাহবার নিজামের ডেরায় বসে দিনরাত কূটকৌশল করে শামীম ওসমানের ‘ছোট ভাই’ উপাধি পাওয়া নেতারা এখন মিশে যাচ্ছে বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে।

২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনে কঠোর ভূমিকা রেখে নারায়ণগঞ্জে বেশ আলোচিত একজন হয়ে ওঠেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। ধীরে ধীরে সংগঠনের আদর্শ উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন প্রভাবশালী এমপি বর্তমানে পলাতক শামীম ওসমানের পারপাস সার্ভ করতে কাজ করে যান তিনি। শামীম ওসমানের হয়ে তার প্রতিপক্ষ নাসিকের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে ঠেকাতে কাজ করেন তিনি।

পর্দার আড়ালে শামীম ওসমানের হুকুম তামিল করতে ঝাপিয়ে পড়েন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। ধীরে ধীরে সেইসব পর্দার অন্তরালের বিষগুলো শামীম ওসমানের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। শামীম ওসমান প্রকাশ্যেই নিজেই ঘোষণা করেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান তার ছোট ভাই। সেই ফেরদাউসুর রহমান আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের ব্যানার নিয়ে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করতেও দ্বিধাবোধ করেননি।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি। ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানের জয় সহজ করে দিতে জমিয়তে ওলামায়ৈ ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমীর মনোনয়ন বাগিয়ে অনতে কাজ করেন ফেরদাউসুর রহমান। নির্বাচনে যেনো কোনোভাবেই বিএনপির গিয়াসউদ্দীন কিংবা শাহআলম ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন না পান।

শামীম ওসমানের দাবি বাস্তবায়নে এতটাই উদগ্রীব ছিল যে, কেন্দ্রীয় জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম সারাদেশের সব আসন ছাড় দিলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি ছাড়তে নারাজ থাকে। ফলশ্রæতিতে মনির হোসাইন কাসেমীকেই ধানের শীষ প্রতীকে মনোনিত করা হয় এবং ফেরদাউসুর রহমানের মিশন বাস্তবে রূপ নেয়।

একই পন্থীয় ভূমিকা রাখেন সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনে। নির্বাচনে প্রথমে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান। কিন্তু জাকির হোসেনও নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আগ্রহী ছিলেন। এতে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের সঙ্গে মধ্যস্ত করেন ফেরদাউসুর রহমান। মাঝখানে কাজে লাগান অস্ত্রধারী ক্যাডার শাহ নিজামকে। এ নিজামের পরিচালনাধীন নম পার্কে নিয়মিত আড্ডা বসাতেন তিনি। ছিলেন বুলবুল নামের একজন জমির দালাল। মতিউর রহমানকে চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো হয়। মতি তখন নিজকে অসুস্থ দাবি করে নির্বাচন থেকে সরে যান। দ্বিতীয় দফায় কৌশলে জাকির হোসেনের জন্য নৌকা প্রতীকে এনে দেন শামীম ওসমান। জাকির হোসেনের ওই নির্বাচনে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন জমা দেন জাকির হোসেন। নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নিয়ে জাকির হোসেনের নৌকার পক্ষে শোডাউন করেন এবং নির্বাচনী কাজ করেন।

Islam's Group