ফুলবাড়ী গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ২৬ আগস্ট বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা আহবায়ক রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে সদস্য সচিব ধীমান সাহার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক শীবনাথ চক্রবর্তী, বাসদের জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থ, সামাজিক সংগঠন সমমনার উপদেষ্টা দুলাল সাহা প্রমুখ।
রফিউর রাব্বি বলেন, ফুলবাড়ীর আন্দোলন কেবল উত্তরাঞ্চলের মানুষের অধিকারের আন্দোলনে নয়, এইটি দেশের সকল জাতীয় সম্পদের উপর সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সরকারের প্রাণ-প্রকৃতি বিনাশী সকল চুক্তির সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিৎ করার আন্দোলন। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, গোপনে চুক্তি করার বিরুদ্ধে আন্দোলন।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিদেশি ঋণ কোম্পানীনির্ভর কয়লা-পারমানবিক-এলএনজিকেন্দ্রীক রামপাল, রূপপুর ও মাতারবাড়ীসহ প্রাণবিনাশী বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে যা দেশে ও মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে।
তিনি ২০১৭ সালে ‘তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’র পক্ষ থেকে নবায়ন ও অনবায়ন যোগ্য জ¦ালানির সমন্বয়ে সারা দেশে সুলভে, নিরবিচ্ছিন্ন, পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ জোগানের যে প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফুলবাড়ীর কয়লা উত্তোলনের জন্য তৎকালীন জোট সরকার এশিয়া এনার্জিও সাথে যে চুক্তি করেছিল তা ছিল দেশ ও জনস্বার্থ বিরোধী। প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী উত্তোলিত কয়লার ৯৪ শতাংশ পাবে এশিয়া এনার্জি আর বাংলাদেশ পাবে মাত্র ৬ শতাংশ। কিন্তু উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলিত হলে ফুলবাড়ি শহরসহ আশপাশের ছয়টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্থ হতো। পানির স্তর নিচে নেমে কৃষিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়তো, কয়েক মাইল এলাকা জনবসতি স্থানান্তরিত হতো, উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়ে পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতো। এমনি অসম ও আত্মঘাতী চুক্তির বিরুদ্ধে, বাস্তুভিটা, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করতে এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ সে দিন রাস্তায় নেমে আসে। গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। আন্দোলনের মুখে এশিয়া এনার্জি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সকলে ফুলবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। সরকার সে প্রকল্প বাতিল করতে বাধ্য হয়। ফুলবাড়ীর জনগণ জীবন দিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছে।
সমাবেশের শুরুতে জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে ফুলবাড়ী আন্দোলনে নিহত তরিকুল ইসলাম, আমিন ও সালেকিন স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :