আওয়ামী সরকার আমলে সরকারি তোলারাম কলেজ ছিলো সন্ত্রাসের রাজত্ব। ছাত্র জনতার আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে চলা সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব ও ভয়ের রাজত্ব এখন ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। কলেজ প্রশাসন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও অপরাপর ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের দাবী, র্তমানে কলেজ প্রাঙ্গণ সম্পূর্ণভাবে ত্রাসমুক্ত এবং একটি শান্তিপূর্ণ, শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ফিরে এসেছে। সেই সাথে ফিরেছে সহবস্থানের মাধ্যমে ছাত্র সংগঠনগুলো। নিজ নিজ দলের কমিটি নিয়ে ছাত্র রাজনীতি করে যাচ্ছেন তারা।
সূত্র বলছে, প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ কলেজে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আসছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, সাংবাদিকদের মারধর, মাদক ব্যবসা, আবাসিক হল দখল, এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বারবার। এসব কার্যক্রমের ফলে কলেজ চত্বর ছিল আতঙ্ক ও দখলের স্থায়ী কেন্দ্র।
তবে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ, গণআন্দোলন এবং গণমাধ্যমে লাগাতার প্রতিবাদে অবশেষে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। ছাত্রসমাজ ও স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় ভ‚মিকায় রিয়াদ ও তার অনুসারীরা কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন।
বর্তমানে তোলারাম কলেজে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রন্ট সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন অবাধে ও শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন, এখন কোনো ধরনের ভয়ভীতি ছাড়াই তারা ক্যাম্পাসে চলাফেরা করতে পারছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করছে এবং ছাত্ররাজনীতিতেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।
কলেজের একজন ছাত্র বলেন, আগে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই ভয় লাগতো। এখন আমরা নিজেদের কলেজকে ফিরে পেয়েছি। এখন আর কেউ ধরে নিয়ে সভা সমাবেশে নিয়ে যায় না। র্যাগিং দেয় না। গেট আটকে রেখে কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করে না। আগে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে তাদের কর্মসূচি করাতো। সেই পরিবেশ এখন আর নেই।
সম্প্রতি সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্র শিবিরের আংশিক কমিটি প্রকাশ করা হয়। কমিটিতে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন স্নাতক ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম। ছাত্র শিবিরের নেতৃবৃন্দরা জানান, আগামী দিনগুলোতে কলেজ ক্যাম্পাসে ইসলামী আদর্শ ও ছাত্র কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড বেগবান করাই হবে এই নেতৃত্বের প্রধান লক্ষ্য।
বৃহস্পতিবার সরকারি তোলারাম কলেজে ছাত্রদল তাদের আংশিক কমিটি প্রদান করেছে। ১১ সদস্যের এই কমিটিতে সভাপতি মনির হোসেন জিয়া, সিনিয়র সহ সভাপতি ইমাম হোসেন, সহ সভাপতি সানি আলম, আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক ফারুক খান সুজন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হরাফায়েত উল্লাহ তুহিন, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শুভ, জাহিদুল ইসলাম জয়, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ অপু, দপ্তর সম্পাদক এম এ হানিফ মঞ্জু (রহিত), প্রচার সম্পাদক ইয়াসিন।
এছাড়া ছাত্র ফেডারেশন ও ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক কার্যক্রম আগে থেকেই বিদ্যমান রয়েছে। ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মিরা বলছেন। বিগত সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের কারনে ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতি তোলারাম কলেজে করাই যেত না। তোলারাম কলেজকে সন্ত্রাস, মাদকের আড্ডাখানা বানিয়ে রেখেছিলো রিয়াদ ও তার লোকজন। তারা পালিয়ে যাবার পর থেকে কলেজে ফিরেছে স্বস্থি। ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতি এখানে চালিয়ে যেতে পারছেন শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে হল বা সিট নিয়ে জোড়জুলুমের কোন ঘটনাও নেই।
আপনার মতামত লিখুন :