ছাত্র-আন্দোলন প্রতিহত করতে শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত শিয়ারচরের আওয়ামী লীগ নেতা ডিস ডালিম, ইবু ও সজল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশের চোখে পলাতক হলেও এলাকায় তাদের উপস্থিতি জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, ডালিমদের ভাইদের মধ্যে আবুল হোসেন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এছাড়াও ভাতিজা সজলের বিয়েতে উকিল হয়েছেন চাঁদাবাজির অভিযোগে বহিস্কৃত ফতুল্লার প্রভাবশালী এক নেতা। তাদের প্রভাবে এখন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়াতে চাইছেন।
আওয়ামী লীগ শাসন আমলে ডালিম বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচারে লালখাঁ, রামারবাগ ও আশপাশের এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। সবশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থানরত মুরসালিন আলম গুলিবিদ্ধের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামী হয়েছে ডালিম, ইবু ও সজল।
এছাড়া ছাত্রজনতার আন্দোলন প্রতিহত করার ঘটনায় তাদের আরও একটি মামলা রয়েছে ফতুল্লা থানায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক সময় শিয়াচরের লালখাঁ এলাকায় সিনেমার সিটি ও ডিবিডি ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন ডালিম। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে কাঠেরপুলের নিয়ন্ত্রণ নেন গিয়াসউদ্দিন গেসু ও তার ভাই আজমত আলী। তাদের সহযোগীতায় প্রভাব বিস্তার করে ক্যাবল টিভির (ডিস) ব্যবসার নেটওয়ার্ক লালখাঁ, রামারবাগ, তক্কারমাঠসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে দেন ডালিম। এলাকার মানুষের কাছে পরিচয় পেয়েছেন ডিস ডালিম হিসেবে।
গত ১৭ বছরে ডিস ব্যবসার আড়ালে ভ‚মি দস্যুতা, মাদক ও সন্ত্রাসের নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ডালিম। লালখাঁ, শিয়ারচর, রামারবাগ, লামাপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ১০টির অধিক বাড়ি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে সম্পদ গড়েছেন।
একাধিক ব্যক্তি জানান, শামীম ওসমানের ডাকা মিটিংগুলোতে বিশাল জনসমাগম দেখানের চেষ্টা করতেন গিয়াস উদ্দিন ও আজমত আলী। সেই মিটিং গুলোতে লালখাঁ, রামারবাগ ও আশপাশের এলাকার গার্মেন্ট শ্রমিকদের জোর করে নিয়ে লোকারণ্য করার দায়িত্ব থাকতো ডালিমের উপর। এ জন্য তিনি বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন।
শিল্প অধ্যুষিত ফতুল্লায় প্রায়ই শ্রমিকদের বেতন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই হয় প্রতিনিয়ত। মাদক সেবন ও বিক্রির সাথে জড়িত গ্রুপটির সদস্যরা।
একাধিক এলাকাবাসী জানান, এ সকল চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির সাথে জড়িত ডালিমের ভাতিজা সজলের বাহিনীর সদস্যরা। কয়েক বছর পূর্বে রিকশা ছিনতাই করতে গিয়ে চালককে খুনের ঘটনায় ভাতিজা সজলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচত সজিবকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেন। এছাড়াও পুলিশের তদন্তে বেড়িয়ে আসে এই বাহিনীর অন্যতম সদস্য ঠান্ডুর নাম। ছোট ঘটনাগুলোতে বিচার-শালিস করে বাহিনীর সদস্যদের অভিযোগ থেকে মুক্ত করতেন ডালিমের বড় ভাই ইবু মিয়া। ঘটনা বড় হয়ে গেলে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতেন। সেখানে সহযোগীতা করতেন গিয়াস উদ্দিন ও আজমত আলী।
আপনার মতামত লিখুন :