গত ৩নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে দুটি আসনে নতুন মুখ আর দুটি আসনে পুরাতনদের দেখা মিলেছে। যার ফলে গত এক মাস যাবৎ বিএনপি প্রাথমিক ঘোষিত চারটি আসনেই মনোনয়ন বঞ্চিতরা তৎপরতা ছিলো চোখে থাকা মত। সভা-সমাবেশ, মশাল মিছিল ও মোমবাতি প্রজ্জ¦ালনের মাধ্যমে মনোনীতদের বিরুদ্ধে অবস্থানে শক্ত পোক্ত দেখিয়েছে বঞ্চিতরা।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আজহরুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ মাসুদুজ্জামান মাসুদ ধানের শীষ প্রতীকের ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ওই সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৭ আসনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছি। আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছেন, তারা যে সমস্ত আসনে আগ্রহী সে সমস্ত আসনে প্রার্থী দেই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা করবো। এটা আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা, এর মধ্যেই পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে, আমাদের শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনা এবং স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে কোনো আসনে পরিবর্তন আনবে, সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনবেন।”
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর) মনোনীত মাসুদুজ্জামান মাসুদ ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপিতে যোগ দেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাসকুদুল আলম খোরশেদ, বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল, আবুল কাউসার আশা। এদের মধ্যে বিরোধীতা থাকলেও গত ১৫ নভেম্বর মাসুদুজ্জামান মাসুদকে পরিবর্তন দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা। ১১ দিনের ব্যবধানে মাসুদুজ্জামানের সাথে দেখা যায় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে। এতে বঞ্চিতদের মধ্যে হতাশা দেখা না গেলেও মাসুদুজ্জামান পরিবর্তন ক্ষেত্রে পিছু হটেনি তারা। প্রতিনিয়ত বঞ্চিতরা একত্রে লিফলেট বিতরণ, পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ, দোয়া মিলাদ ও মোমবাতি প্রজ্বালনে সক্রিয় ছিলেন।
অন্যদিকে বিএনপি এখনো নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনে কোন প্রার্থীকে ঘোষণা করেনি। বিএনপির সাথে জোটের কারণে এই আসনটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক পার্টি। এই আসনটি ২০২৪ সালের মত জোটের প্রার্থী ছাড় পাবেন। তবে এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী শাহ্ আলম, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। একই সাথে বিএনপি পন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ৯৬ সালের এমপি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক মোহাম্মদ আলী।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁও) আসনে আবারো দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও যুব উন্নয়নের সাবেক মহাপরিচালক এসএম ওলিউর রহমান আপেল। মান্নানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মনোনয়ন বঞ্চিত ৭জন সক্রিয় হয়ে দলের চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন। প্রতিনিয়ত মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সভা সমাবেশ মশাল মিছিল করে যাচ্ছেন মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের সমর্থকরা।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়ন পান কেন্দ্রীয় বিএনপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। তার এই আসনে প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর, তার ভাতিজা বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন ও কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার। ইতোমধ্যে আজাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বঞ্চিতরা এক মঞ্চে প্রার্থী বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। মশাল মিছিল সহ পাল্টাপাল্টি মিছিলে সরগরম রয়েছে আড়াইহাজার নির্বাচনী এলাকা।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) আসনে মনোনয়নে প্রথম দলীয় প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান দীপু ভূইয়া। ক্লিন ইমেজের এই নেতাকে দলের মনোনীত হওয়ার পিছনে তরুণদের কারিশমা ছিলো আলোচিত। এই আসনটি প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন। বঞ্চিত হলেও দীপু ভুইয়াকে সমর্থন দেন প্রত্যাশিতরা। কিন্তু মনোনীত হওয়ার ২৩দিন পর রূপগঞ্জে দীপুর বিরুদ্ধে মশাল মিছিল বের করে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়।








































আপনার মতামত লিখুন :