News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

প্রার্থীহীন বিএনপি, মাঠে বাড়ছে অনিশ্চয়তা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ১০:১০ পিএম প্রার্থীহীন বিএনপি, মাঠে বাড়ছে অনিশ্চয়তা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মাঠ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রস্তুতির নানা ঘাত প্রতিঘাত। তবে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কেড়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসন। কারণ, দলের দ্বিতীয় দফার ঘোষণাতেও এই গুরুত্বপূর্ণ আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হয় নি। ফলে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি, অনিশ্চয়তা এবং উত্তেজনা দিনে দিনে আরও বাড়ছে। বিএনপি ইতোমধ্যে প্রথম দফায় ২৩৭টি এবং দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। কিন্তু দুই পর্যায়েই তালিকায় নেই নারায়ণগঞ্জ-৪। রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে জোর আলোচনা, দলীয় হাইকমান্ড ইচ্ছাকৃতভাবেই কি আসনটি ঝুলিয়ে রাখছে, নাকি কোনো জোটগত সমীকরণের জন্য অপেক্ষা করছে? স্থানীয় পর্যায়ে এই অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে দিয়েছে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।

এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে জোট করে এই আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও কি দলটি একই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন উঠছে বারবার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মনির হোসেন কাসেমীর সম্ভাব্য প্রার্থীতার বিষয়টি এখনও পুরোপুরি পরিস্কার না হওয়ায় বিএনপিও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে না। কিন্তু মাঠের রাজনীতি বলছে ভিন্ন কথা। এই আসনে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন একাধিক ভারী ও পরিচিত মুখ সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, সাবেক সহ-সভাপতি শাহ আলম, আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি এবং নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটুর মতোন আরও অনেকে।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে জোরালো দুই সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন শাহ আলম, মোহাম্মদ আলী ও গিয়াস উদ্দিন। ২০০১ সালে এই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ফতুল্লাভিত্তিক রাজনীতি করতে থাকা শাহ আলমের রয়েছে শক্তিশালী গণভিত্তি। বিশেষ করে নতুন সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে সিদ্ধিরগঞ্জ বাদ পড়ায় শাহ আলমের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা। এছাড়া জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে মোহাম্মদ আলী। এর আগেও নির্বাচন করে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। কয়েকদিন পূর্বে এক কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত ৮ নভেম্বরের পর শীর্ষ পর্যায় থেকে গিয়াস উদ্দিনকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মৌখিকভাবে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে জমিয়ত যদি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী না দেয়, তাহলে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক হাতে তুলে পেতে পারেন তিনিই। তবে শাহ আলমও নীরব নন। প্রতিদিন মাঠে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও প্রচারণামূলক কর্মসূচি চালিয়ে তিনি নিজের অবস্থান আরও শক্ত করছেন। তরুণ ভোটারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি তিনিও নিয়মিত কর্মসূচি করে আলোচনায় আছেন। তবে শেষ পর্যায়ে মোহাম্মদ আলীর এমপি হতে লড়াইয়ের ঘোষণা এই আসনের লড়াই আরও জমিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু তবুও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বিএনপি কেন বারবার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই আসনের নেতাকর্মীদের প্রতি দলীয় হাইকমান্ডের অবহেলার একটি ধারাবাহিকতা বহু বছর ধরে চলছে। তাদের অভিযোগ, প্রার্থী তালিকা প্রকাশের প্রতিটি পর্যায়ে আশাবাদী হলেও শেষ পর্যন্ত শুধু হতাশাই ঘিরে ধরছে। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ এখন রাজনীতির অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছে। বিএনপি যদি শেষ মুহূর্তেও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়, তবে শাহ আলম, গিয়াস উদ্দিন কিংবা অন্য কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতৃত্বে এখানে গড়ে উঠতে পারে এক তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভোটযুদ্ধ। আর সে লড়াই হবে শুধু প্রতীক নয় ব্যক্তির জনপ্রিয়তা, মাঠের দখল এবং সংগঠনের শক্তির উপর। এখন চোখ থাকছে বিএনপির পরবর্তী ঘোষণার দিকে। দলটি কি নিজস্ব প্রার্থী দেবে, নাকি আবারও জোট রাজনীতির পথ বেছে নিবে সেটাই নির্ধারণ করবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের নির্বাচনী সমীকরণ।  

Islam's Group