নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সদর) আসন এলাকার ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভাব হতে পারেন জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহ আলম ও ইসলামী দলগুলো। শাহ আলমের ক্লিন ইমেজ, দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়া ও ইসলামী দলগুলোর রিজার্ভ ভোট নির্বাচনী হিসেবে নিকেশে বড় বাধা হিসেবে আবির্ভাব হবে।
আর এই বাধা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশ জমিয়তে উলামা ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। হয়তো তিনি ধারে কাছেই পৌছাতে পারবেন না।
দলীয় সূত্র বলছে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি আসন ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সদর) আসনে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে এই আসনটিতে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী কতটুকু সফল হতে পারবেন সেটাই পরিলক্ষিত বিষয়। জনসাধারণের ভোট কতটা তার করে নিতে পারবেন সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সংশয় রয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসন এলাকায় অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ শাহ আলম। যিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন। কিন্তু বারবার নির্বাচনী সমীকরণে তাকে পিছনে ঠেলে দেয়া হয়। এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসন এলাকায় তার জনপ্রিয় অবস্থান ধরে রেখেছেন।
বরং আগের চেয়ে তিনি আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তার নির্বাচনী এলাকায়। কারণ গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রভাবশালী নেতারা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে আসলেও শাহ আলম ছিলেন একেবারেই প্রভাবমুক্ত। কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো রকমের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করতে পারবে না। একই সাথে বিভিন্ন নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হলেও শাহ আলমের বিরুদ্ধে কেউ চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে পারবে না।
পাশাপাশি শাহ আলমের কোনো বাহিনী নেই। তার কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী। অথচ বর্তমানে এমন কোনো নেতা পাওয়া যাবে না যার কোনো বাহিনী নেই। নেতারা যেখানেই গিয়ে থাকেন সেই সাথেই তার বাহিনী ঘিরে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে একবারেই ব্যতিক্রম শাহ আলম। আর এজন্যই নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসন এলাকায় তার ক্লিন ইমেজ রয়েছে। সেই সাথে সংসদ সদস্য পদে জয়ী হওয়ার মতো তার অবস্থাও রয়েছে।
এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলাপ আলোচনার শুরু থেকেই শাহ আলম বেশ জোরেশোরে নিজেকে জানান দিতে শুরু করেছেন। সেই সাথে বিভিন্ন সভা সামবেশের মধ্য দিয়ে নিজেকে জানান দিয়ে যাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের সাথেও আগের থেকে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. শাহ আলমের উদ্যোগে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। আফিয়া জালাল ফাউন্ডেশন ও জান্নাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় এসক মেডিকেল ক্যাম্পে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। এসকল সামাজিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা তিনি ধরে রেখেছেন।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ শাহ আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও নাটকীয়ভাবে শেষ মুহূর্তে এসে ২০-দলীয় জোটের উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী মনির হোসেন কাসেমীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিলো।
তার আগে, ২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে মাত্র ২ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে তাকে নির্বাচনে পরাজিত করা হয়েছিলো। সে হিসেবে সংসদ নির্বাচনে শাহ আলমের আগে থেকেই অভিজ্ঞ। সেই সাথে তার বিজয় অর্জন করার মতো যোগ্যতা রয়েছে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এলাকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের বিপুল সংখ্যত রিজার্ভ ভোট রয়েছে। যে ভোটগুলো নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি পক্ষে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
একই সাথে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী আবদুল জব্বার তার বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জনসাধারণের নজর কেড়েছেন। যা জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থীর জন্য প্লাস পয়েন্ট হিসেবে যোগ হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী ইসমাইল হোসেন সিরাজীও নিজেকে জানান দিয়ে আসছেন।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ, বিশিষ্ট ওয়ায়েজ, ব্যবসায়ী, দানশীল, সমাজসেবক জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানার কাশিপুর ইউপির ভোলাইল আল আকসা জামে মসজিদের ১৭ বৎসরের খতিব, ফতুল্লা পঞ্চবটি তারতীলুল কোরআন মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল, ২০১৩ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর ও নায়েবে আমীরের নির্দেশে রাজপথে থেকে সক্রিয়ভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নারায়ণগঞ্জ- ৪ এ মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ এর প্রতিটি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
সবমিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলাম আন্দোলন বেশ ভালো একটি অবস্থান গড়ে তুলেছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের ভালো অবস্থান আর শাহ আলমের জনপ্রিয়তা এক হয়ে গেলে মুফতি মনির হোসেন কাসেমীর জন্য ভোটের লড়াই অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে। হয়তো নির্বাচনী বৈতরনীই তিনি পার হতে পারবেন না। নির্বাচনে লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করতে হতে পারে তাকে।


































আপনার মতামত লিখুন :