News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২

দেশে স্থিতিশীল না আসলে আগামীতে আরও কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম দেশে স্থিতিশীল না আসলে আগামীতে আরও কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার কারণেই বিভিন্ন পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বিষয়টি তা নয়। কয়েকটি কারখানা আগে থেকেই বন্ধ হওয়ার উপক্রম ছিল। বিগত সরকারের আমল থেকেই ফ্যাক্টরিগুলো দুর্বল অবস্থায় ছিল। এর মূল কারণ যদি বলতে হয় তাহলে তা হচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। আর আমাদের পোশাক খাতের এই সমস্যা শুরু হয়েছে মহামারী করোনা সময়কাল থেকেই। ব্যাংকের সুদহার বেড়ে গেলো, অর্ডার কমতে থাকা থেকেই কারখানাগুলো দুর্বল হতে লাগলো। ৫ই আগস্টের পর এই ধাক্কা সারাদেশে পড়লে অর্ডার আরও কমে যায়। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না। সব মিলিয়ে কারখানাগুলোর আরও নাজুক অবস্থা তৈরি হলে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। দেশে স্থিতিশীল না আসলে আগামীতে আরও কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ” 

প্রঙ্গত রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, উৎপাদন অপ্রতুলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ বিভিন্ন কারণে নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানাগুলোতে অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বেশ কয়েকটি কারণে পোশাক কারখানার উৎপাদন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া পোশাক শ্রমিকদের কেউ কেউ উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রায়সময় বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবি নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে কারখানায় কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। গত এক বছরে নারায়ণগঞ্জে এমন অন্তত ১০টি ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে সময়মতো অর্ডার সরবরাহ করতে পারছেন না অনেক পোশাক কারখানার মালিকরা। এদিকে চাকরি হারিয়ে অনেক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পেশা পরিবর্তন করে অনেক পুরুষ শ্রমিক নিজের গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ার পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ করে টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করছেন।

জেলা শিল্পাঞ্চল পুলিশ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বতর্মানে নারায়ণগঞ্জে ছোট বড় মিলিয়ে সর্বমোট ১৮৩৪টি পোশাক কারখানা রয়েছে। বিভিন্ন কারণে গত ৫ই আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত এক বছরে ২৬টি পোশাক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চাকরি হারিয়েছেন ৫ হাজার ৩৪২ জন। এর আগে ২০২৪ সালের শুধু জুলাই মাসে অর্থাৎ এক মাসেই ১০টি পোশাক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে নীট গার্ডেন, একে ফ্যাশন লিমিটেড, লা মেইজন কচুর লিমিটেড, মোল্লা নীট ফ্যাশনসহ অন্তত ৮টি বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদিকে কারখানাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পোশাক কারখানার মধ্যে সিংহভাগ কারখানাই বন্ধ হয়েছে আর্থিক সংকট এবং পর্যাপ্ত কাজের অভাবের কারণে। স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও গত এক বছরে নারায়ণগঞ্জের ১৯টি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কারখানা লে-অফ করা হয়েছে।

তবে নারায়ণগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বলছে ভিন্ন হিসাব। তাদের হিসাবমতে, নারায়ণগঞ্জে নিবন্ধনকৃত পোশাক কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ১০টি। এর মধ্যে গত এক বছরে মোট ৯টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া নীট গার্ডেন নামের এক কারখানার অ্যাডমিন কামরুল হোসেন রনি বলেন, “কারখানাটিতে প্রায় সাড়ে ৪০০ শ্রমিক কাজ করতো। দৈনিক ১০ হাজারেরও বেশি পোশাক তৈরি হতো। আর টাকার অঙ্কে বলতে গেলে প্রতিদিন ২০ হাজার ডলারের বেশি পোশাক তৈরি হতো। ব্যাংক খেলাপির কারণেই মূলত আমাদের কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আমাদের প্রত্যেক শ্রমিকের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে।”

এএসটি গার্মেন্টের মালিক মো. আতিকুর রহমান বলেন, “অর্ডার কমে যাওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভর্তুকি দিয়ে কয়েকমাস কারখানাটি পরিচালনা করা হয়েছিল। ”

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি এমএ শাহীন বলেন, “নারায়ণগঞ্জে যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এসব কারখানার অধিকাংশ শ্রমিক বেঁচে থাকার জন্য এখন অটোরিকশা চালাচ্ছেন, কিছুসংখ্যক শ্রমিক গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। আবার কিছুসংখ্যক শ্রমিক দিনমজুরের পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শিল্পকারখানায় কাজের চাপ কম। যেসব কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় সহায়তা কারখানাগুলো পুনরায় চালু করা। পাশাপাশি আরও নতুন নতুন কারখানা স্থাপন করা উচিত। এতে করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তা না করতে পারলে কোথাও চাকরি না পেয়ে কিছুসংখ্যক শ্রমিকের অপরাধপ্রবণতার দিকে ঝুঁকে যাওয়ার কিছুটা শঙ্কা থাকে।”

কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “অর্ডার কমে যাওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি কারখানার মালিকপক্ষ আওয়ামী লীগপন্থী হওয়ায় অব্যবস্থাপনার কারণে বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।”

পোশাক কারখানা বন্ধের বিষয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-৪, নারায়ণগঞ্জ জোনের পরিদর্শক (গোয়েন্দা) সেলিম বাদশা বলেন, “এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি অনেক কারখানা নতুন করে উৎপাদনে গিয়েছে। কোনো কোনো কারখানায় কাজের চাপ কম রয়েছে। এসব বিষয়ে কারখানার মালিকরা ভালো বলতে পারবেন। কারখানাগুলো সচল হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকরা ঠিকমতোন বেতন পাচ্ছে কিনা তা আমরা নিয়মিত তদারকি করে থাকি। শ্রমিকদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে তখন তা নিয়ে আমরা কাজ করি।”

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ-মহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ বলেন, “বিভিন্ন কারণেই গত এক বছরে কয়েকটি পোশাক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের পক্ষ থেকে সবসময় চেষ্টা থাকে কোনো কারখানা যেনো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে না যায়। এতে করে অনেক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েন।”

পোশাক কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভ‚ঁইয়া দিপু বলেন, “বায়ার না পাওয়া, আর্থিক সংকট ও বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু মালিক পতিত সরকারের ঘনিষ্ট ছিলেন, তাঁরাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর এসব সমস্যার কারণে লাস্ট কয়েক মাসে নারায়ণগঞ্জে বেশ কয়েকটি শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে একজন শ্রমিক বেকার হওয়ার পাশাপাশি তাঁর পরিবারের সদস্যরাও সমস্যার মুখে পড়েছেন। সরকারের উচিত, বাইরে থেকে যে শক্তিগুলো এই শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়া।”

Islam's Group