News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাআমাদের পথপ্রদর্শকদের স্মরণে


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ০৮:১৪ পিএম বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাআমাদের পথপ্রদর্শকদের স্মরণে

শিক্ষক এই একটি শব্দের মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে সমাজ, সভ্যতা ও একটি জাতির ভবিষ্যৎ। শিক্ষক শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান দান করেন না, তারা একটি শিশু মনকে গড়ে তোলেন আদর্শ মানুষ হিসেবে, চিনিয়ে দেন জীবনের উদ্দেশ্য, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য এবং সত্যিকার সাফল্যের পথ। আর আজ, বিশ্ব শিক্ষক দিবসে, আমি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি আমার জীবনের সেইসব আলোকবর্তিকা, যাদের আদর, শাসন, ভালোবাসা ও দিকনির্দেশনায় আমি মানুষ হতে পেরেছি।

আমার প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের প্রথম ভিত্তি গড়ে উঠেছিল সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে ছিলেন শ্রদ্ধেয় মোসলেম উদ্দিন স্যার, মো. আব্দুল কাদির স্যার ও কাসেম স্যার যারা শুধু পাঠদানের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, আমাদের শাসন করতেন পিতৃসুলভ ভালবাসায়, শেখাতেন শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা এবং দায়িত্ববোধ। তখন হয়তো বুঝতাম না, কিন্তু আজ বুঝি তাদের কঠোরতা ছিল আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় ভিত গঠনের অংশ। মোসলে উদ্দিন স্যারের আদর আজও যেন আমার পিঠে লেগে আছে। কাদির স্যার ৫ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার আগে আমাদের জন্য কঠোর অনুশাসনের দেয়াল তৈরি করেছিলেন যেন আমরা ব্যর্থ না হই।

এরপর জীবনের আরেক ধাপে পা রাখি সনমান্দী হাছান খান উচ্চ বিদ্যালয়ে, যেখানে পেয়েছি আরো কিছু অসাধারণ শিক্ষক। আলী আহম্মদ স্যার, ন‚রুল আমিন হুজুর, আশেক স্যার, কামাল স্যার, আবদুর রশিদ স্যার, হারেস স্যার ও আজিজুল হক স্যার। তারা ছিলেন শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের প্রকৃত কারিগর। প্রধান শিক্ষক হিসাবে আলী আহম্মদ স্যারের দীর্ঘদিনের ত্যাগ ও অসামান্য শ্রমের ফসল আজকের সনমান্দী হাছান খান উচ্চবিদ্যালয়। ন‚রুল আমিন হুজুরের ধর্মীয় শিক্ষা, আশেক স্যারের গল্পবলার ভঙ্গিমা এবং কামাল স্যার, হারেস স্যার আজিজুল হক স্যারের কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা এই সবই আমাকে একজন পরিপ‚র্ণ শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলেছিল। হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক আবদুর রশিদ স্যারের অপার স্নেহ ও অনুপ্রেরণা ম্যাজিক মতো মনে হত। মাত্র এক সপ্তাহ সারের সান্নিধ্যে এসে একটি বিষয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলাম । আরজু স্যারের গোটা গোটা সুন্দর হাতের লেখা ৭ম শ্রেনিতে পড়ুয়া আমার হৃদয়ে ঝড় তুলে দিয়েছিল।

উচ্চশিক্ষার পথে পা রাখার পর যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই, তখন পরিচিত হই নতুন ধরনের শিক্ষকতার সঙ্গে। দার্শনিক ও জ্ঞানতাপস সরদার ফজলুল করিম স্যার, ড. বজলুর রহমান খান স্যার, ড. আতাউর রহমান খান স্যার, ড. এনামুল হক খান স্যার, ড. শিরিন আক্তার ম্যাম, ড. তাইবুল হাসান খান স্যার, ড. এহতেশাম স্যার, লুৎফুল হাই জামী স্যার, ড. একেএম শাহনেওয়াজ স্যার ও আতিকুর রহমান স্যার তাঁরা শুধু বিষয়বস্তুর ভেতরে সীমাবদ্ধ ছিলেন না, তাঁরা আমাদের শেখাতেন বিশ্লেষণ, ভাবনা, যুক্তি এবং জীবনদর্শন। সরদার ফজলুল করিম স্যারের দার্শনিক চিন্তাভাবনা আজও আমাকে ভাবতে শেখায়। তাইবুল হাসান খানের যুক্তিবাদী শিক্ষা ও ল্যুৎফুল হাই জামি স্যার, আতিকুর রহমান স্যারের বাস্তবতাবোধ আমার চিন্তার জগতে আলো ছড়িয়েছে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস কেবল একটি দিন নয়। এটি একটি উপলক্ষ্য, যখন আমরা হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই সেই মানুষগুলোকে, যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে আমাদের আলোকিত করেছেন।

শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা একটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক উন্নতির স‚চক। আসুন, আজকের এই দিনে আমরা সম্মানিত শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে নিজেদেরও আরও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি।

এই শিক্ষকগণই আমাদের সমাজের ম‚ল স্তম্ভ। একজন প্রকৃত শিক্ষক নিজেকে বিলিয়ে দেন, ছাত্রের চোখে স্বপ্ন বুনে দেন, আর জীবনের প্রতিটি বাঁকে অনুপ্রেরণার বাতি জ্বালিয়ে দেন।

আজ এই দিনটিতে আমরা প্রতিজ্ঞা করি তাঁদের শিক্ষা, আদর্শ ও ম‚ল্যবোধকে হৃদয়ে ধারণ করে আমরা হবো আলোর বাহক। আর ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝেও সেই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবো, যেমনটা তারা আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।

Islam's Group