নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের শাসনামলের খোকন সাহার ভূমিকায় যেন অবর্তীর্ণ হয়েছেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান অভিযোগ তুলেছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেউ কেউ। সাখাওয়াত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক পদে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের রেজা-গালিব প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট শেখ মো. গোলাম মোর্শেদ গালিব বলেন, এবারের নির্বাচন শুধু বারের নির্বাচন নয়। এবারের নির্বাচন হচ্ছে নমিনেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচন মহানগর কমিটি বাঁচানোর নির্বাচন। কারণ সাখাওয়াত হোসেন খান চিন্তা করছে এবারের নির্বাচনে যদি হুমায়ুন ও আনোয়ারের ভরাডুবি হয় তাহলে তার মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এবারের নির্বাচনে যদি হুমায়ুন-আনোয়ারের ভরাডুবি হয় তাহলে মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে যেতে পারে। ভরাডুবি হলে নারায়ণগঞ্জ আদালতে সাখাওয়াত হোসেন খানের আধিপত্য নষ্ট হয়ে যাবে। এসকল কারণে তিনি প্রার্থী না হওয়া সত্বেও তিনি ভোটারদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে। তিনি ভোটারদের কেন হুমকি দিবেন? তিনি কেন বলবেন? ভোট দিতে আসবে না। বিজয় আসলে হুমায়ুন-আনোয়ার তার আজ্ঞাবহ হয়ে থাকবে। পিপি জিপিদের বলা হয়েছে একত্রিত হয়ে প্রকাশ্যে ভোট দিতে হবে। প্রকাশ্যে ভোট দিতে হলে আর ভোটের দরকার নেই। তাহলে ভোট ব্যবস্থা বাদ করে দিলেই তো পারে। আমরা শুনতে পারছি ব্যালট অধিক চাপা হয়েছে। এই অধিক চাপানের কারণ কি? আমাদের জানাতে হবে কি পরিমাণ ব্যলট চাপানো হয়েছে। এটা আমাদের অধিকার। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ যা করছে সাখাওয়াত ভাইরা সেটা করছে। মূলত তিনটি কারণেই সাখাওয়াত ভাই টেম্বারিং করছে। গত বুধবার নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট সুমন মিয়ার সাথে অ্যাডভোকেট টিপু ভাইয়ের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হাতাহাতি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনারের সাথে টিপু ভাইয়ের কেন হাতাহাতি হবে? আমরা অসহায়; নির্বাচন কমিশনারও অসহায়।
এদিকে সাধারণ আইনজীবীদের মতে, আগে আওয়ামী লীগের প্যানেলের পক্ষ হয়ে অ্যাডভোকেট খোকন সাহা সহ তার অনুসারীরা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতেন। ঠিক এবারেও বিএনপির আইনজীবীদের প্যানেলের পক্ষ হয়ে সাখাওয়াত হোসেন খান সহ তার অনুসারীরা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয়নি। নির্বাচনের সময় আসলে আগেও আমাদের হুমকি ধমকির মধ্যে থাকতে হতো এখনও আমাদের হুমকি ধমকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমরা মনে করেছিলাম আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হয়তো বহু দিন আদালতপাড়ায় উৎসবের আমেজ ফিরে আসছে। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সেই আমেজ যেন বিস্বাদে পরিণত হয়েছে। সেই আগের মতোই আমদের উপর ভয়ভীতি ভর করছে। নির্বাচনে ভোট নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদেরকে প্রতিদিনই মামলায় আসামী করার হুমকি দিচ্ছে। প্রতিদিনই বলে পুলিশ ডেকে এনে গ্রেফতার করিয়ে দিবে।
কিছুদিন আগে বিএনপির এক আইনজীবী নেতা আওয়ামী পন্থী সাধারণ আইনজীবীদের হুমকি দিয়েছেন যদি ভোট দিতে হয় তাহলে তাদের সামনে দেখিয়ে ভোট দিতে হবে। অন্যথায় ভোট দিতে দেয়া হবে না। আর তাদের সামনে ভোট না দিয়ে ভোটে অংশ নিলে এটার হিসেব করা হবে। যদি হিসেব অনুযায়ী আওয়ামী লীগপন্থী সাধারণ আইনজীবীদের ভোট হুমায়ুন-আনোয়ার প্যানেলের বাইরে গেলে তালিকা করে ডিবি পুলিশের কাছে জমা দেয়া হবে। সেই সাথে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
আদালতপাড়া সূত্র বলছে, আগামী ২৮ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে এবারই প্রথম জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের বাংলাদেশ ল'ইয়ারস কাউন্সিল মনোনীত প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট এ. হাফিজ মোল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মাঈন উদ্দিন মিয়া।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দুই প্যানেলের একটিতে নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট এইচ এম আনোয়ার প্রধান। আরেকটির নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম খান রেজা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট শেখ মো. গোলাম মোর্শেদ গালিব।
এই তিন প্যানেলের লড়াইয়ে লড়াইয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার প্রচার-প্রচারণা। সেই সাথে আইনজীবীদের মাঝেও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পাশাপাশি লড়াইটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে।
এদিকে এবারের নির্বাচনে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের ভোট। এই আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের ভোট যাদের দিকেই যাবে নির্বাচনে জয় তাদেরই হবে। ফলে প্রতিদ্ব›দ্বীতায় থাকা সকল আইনজীবীদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের ভোট সংগ্রহ করা। আড়ালে আবডালে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন।
বিভিন্নভাবে তাদেরকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আদালতে যেন নির্ভেজালভাবে মামলা পরিচালনার সুযোগ পান সে বিষয়েও আশ্বস্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদেরকে হুমকিও দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে হুমায়ুন-আনোয়ার প্যানেলের বাইরে যেন আওয়ামী লীগপন্থী সাধারণ আইনজীবীদের ভোট যেন না যায় সেজন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।
আদালতপাড়া সূত্র বলছে, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা নানাভাবে নির্যাতিত নিপেড়িত নিস্পেষিত হন। কেউ বা গুমের শিকার হয়েছেন আবার কেউ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন।
বিগত প্রায় ১৬ বছরে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির আইনজীবীরাও স্বস্তিতে থাকতে পারেননি। তাদেরকেও নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়ন অপমান অপদস্থ হয়েছেন। পাশাপাশি জামায়াত সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আইনজীবীরাও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। আইনজীবীরা নিরাপদে ভোট দিতে পারেননি। নির্বাচনের সময় বহিরাগতরা আদালতপাড়ায় এসে শোডাউন দিয়েছেন। আইনজীবীদেরকে হেনেস্তা করেছেন।
এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরাও আত্মগোপনে চলে যান। তাদের এই আত্মগোপনে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর আইনজীবী সমিতির কর্তৃত্বে আসেন বিএনপির আইনজীবীরা।
সেই সাথে বিএনপির অন্যান্য আইনজীবীরাও প্রভাব আধিপত্য ফিরে পান। আদালতপাড়ার একছত্র নিয়ন্ত্রক বনে গেছেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সহ তাদের অনুসারীরা।
আপনার মতামত লিখুন :