News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২

নিজের অর্জন অন্যকে বিলিয়ে কফিনে শেষ পেরেক ঠুকছেন সাখাওয়াত


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম নিজের অর্জন অন্যকে বিলিয়ে কফিনে শেষ পেরেক ঠুকছেন সাখাওয়াত

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের বিএনপির রাজনীতিতে যাত্রা শুরু হয়েছিলো একেবারেই শূন্য থেকে। সেই শূন্য থেকে একের পর ধাপ পেরিয়ে বিএনপি রাজনীতিতে তিনি দাপুটে অবস্থান করে নেন। প্রত্যেকটি ধাপেই ছিলো তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দক্ষতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলীর অনন্য পরিচয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি যেন তার রাজনৈতিক জীবনে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন যা তার রাজনৈতিক জীবনের কফিনের শেষ পেরেক হতে যাচ্ছে।

অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান তার রাজনৈতিক জীবনের সমস্ত বিসর্জন দিতে যাচ্ছেন প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর বাবুলের মাধ্যমে। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন পেরিয়ে এবার তিনি নিজেকে আবু জাফর বাবুলের পক্ষে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন যা সাখাওয়াত হোসেন খানের অনুসারীদের অনেক মর্মাহত করেছে। যে বিষয়টি তার অনুসারীরা কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছেন না।

বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলছেন, এতদিন সকলে ভাবতেন সাখাওয়াত এমপি প্রার্থী হবেন কারণ তার মেয়র নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আছে। সে লক্ষ্যে তিনি এগিয়ে চলেছিলেন বেশ ভালোভাবেই। মানুষও তাকে গ্রহণ করতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ ছদ্মপতন ঘটান তিনি। নতুন করে আসা একজন এমপি প্রার্থীরে পায়ে তিনি বল ছুড়ে দিলেন। ফলে আগামীতে জোরালো হবে ওই প্রার্থীর প্রচারণা। আর রেস থেকে ছিটকে যাচ্ছেন সাখাওয়াত।

জানা যায়, নারায়গঞ্জ মহানগর এলাকার আওতাধীন ৭০টি পূজা মÐপের প্রতিটিতে উপহার হিসেবে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগরের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এ আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গণে উক্ত উপহার প্রদান অনুষ্ঠিত হয়।

আর অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর বাবুল। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। অনুষ্ঠানটি ছিলো মূলত আবু জাফর বাবুলের আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় বার্তা। আর সেই অনুষ্ঠানে একজন বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েও সাখাওয়াত হোসেন খান হাজির হরয়েছেন; যা নিজেকে বাবুলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন।

বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের কিশোর সময় কেটেছে মুন্সীগঞ্জে। সেই মুন্সীগঞ্জ থাকাকালিন সময়ে ছাত্র অবস্থায়ই জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তৎকালিন সময়ে হ্যাঁ না ভোটে অংশগ্রহণ করেন এবং লঞ্চ দিয়ে জিয়াউর রহমানের সমাবেশে যোগ দিতেন। ৮২ সালে পরিবারের বিধিনিষেধ থাকা সত্বেও সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। সে সময় তিনি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ সভাপতি ছিলেন। এরপর তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ সভাপতি ছিলেন। তারপর তিনি নারায়ণগঞ্জে আসেন। সেই সাথে এরশাদ সরকারের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এরপর নারায়ণগঞ্জ ল কলেজে ভর্তি হন। সে সময় ল কলেজে কোনো সংসদ ছিলো না। তিনি ছাত্র সংসদ চালু করার কার্যক্রমে অংশ নেন এবং কলেজ সংসদের সংবিধান প্রণয়ণ কমিটির সদস্য হন। অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের জুনিয়র হিসেবে আইনজীবী হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে আইনজীবী সমিতির আপ্যায়ন সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় বিএনপির কোনো পদ পদবী না থাকলেও মিছিল মিটিংয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন। ২০০৯ সালে বিএনপি ব্যাকফুটে থাকা অবস্থায় আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্যানেল দেয়ার মতো কেউ ছিলেন। তখন একাই সাহস করে প্যানেল দেন। মিছিল মিটিংয়ে দাবড়িয়ে বেড়ান।

২০১৩ সালে আইনজীবী সমিতি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকাবস্থায় তাকে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে তিনি সকল আইনজীবীদের সমর্থনে দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েই সভাপতি পদে নির্বাচনে অংশ নেন। সেই সাথে বিপুল ভোটে জয়ী হন। তখন থেকেই তার রাজনৈতিক জীবনের টার্নিং পয়েন্ট শুরু হয়। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে তার দাপুটে অবস্থান স্পষ্ট হতে থাকে। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে সাত খুনের মধ্য দিয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা হয়। তাদের মধ্যে একজন আইনজীবীকেও খুন করা হয়। ওই আইনজীবীর পক্ষে তিনি লড়াই শুরু করেন। নারায়গঞ্জের কোনো থানায় মামলা নিচ্ছিলো না। হাইকোর্টে আপিল করলে হাইকোর্ট মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই সাথে সাখাওয়াত আইনজীবী হত্যার বিচার চেয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। টানা ৫৮ দিন আদালত বর্জন কর্মসূচি পালিত হয়। ওই সময়টাতে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলো। শেখ হাসিনার সংসদে বক্তব্য শামীম ওসমানের হুমকি ধমকি বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকি বিপুল পরিমাণ টাকার অফার কোনো কিছুই তাকে থমকিয়ে দিতে পারেননি। তার ডাকে নারায়ণগঞ্জে স্মরণকালের সেরা সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এসময় তার পরিবারকে ঘরবন্দী থাকতে হয় এবং তিনি নিজে কখনও একা চলাচল করতে পারেননি। সেই সাথে এই মামলার পরিচালনার মধ্য দিয়ে তিনি দেশব্যাপী আলোচিত এবং একজন পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন।

বিএনপির আন্দোলনে নিতে গিয়ে তাকে কারাবরণও করতে হয়। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী হন। সেই নির্বাচনে জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা থেকে শুরু করে কেন্দ্রের শীর্ষ নেতারাও নির্বাচন কার্যক্রমে অংশ নেন। তাকে নিয়ে দেশব্যাপী সরগরম হয়ে উঠে।

নির্বাচনের পরপরই মহানগর বিএনপির কমিটিতে সহ সভাপতি পদে দায়িত্ব পান। সেই সাথে তিনি একা একাই মহানগর বিএনপির ব্যানার নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। ২০২২ সালের মহানগর বিএনপিতে আহবায়ক পদে আসেন। আহবায়ক পদে আসার পরপরই দীর্ঘ বছর পর বিভিন্ন থানা কমিটি গঠন হয়। ২০১৮ সালের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রধান ভূমিকা রাখতে গিয়ে তার একমাত্র ছেলেকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। রাজনীতি করতে গিয়ে ৬০ টি মামলার আসামী হয়েছেন এবং ৪ বার কারাবরণ করেছেন। সেই সাথে একসাথে টানা দুই মাস কারাবরণ করেছেন। বহুদিন বাড়ি ঘরে থাকতে পারেননি।

এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। সেই সাথে তিনি বেশ আলোচনাতেও ছিলেন বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে। নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার যথেষ্ট যোগ্যতাও ছিলো সাখাওয়াত হোসেন খানের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেন তার সকল যোগ্যতার বিসর্জন দিয়েছেন প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর বাবুলের নির্বাচনী প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে। যা সাখাওয়াত হোসেন খানে রাজনৈতিক জীবনের আত্মহনন হিসেবেই ধরে নিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Islam's Group