চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর বিকাল ৪ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, বাসদ ফতুল্লা থানার সদস্যসচিব এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল, পতেঙ্গার লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আরও দুটি টার্মিনাল পতেঙ্গার টার্মিনাল-১ এবং বে টার্মিনাল-২ এই দুই টার্মিনালও বিদেশিদেরকে ইজারা দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। দেশের প্রবেশ মুখ হিসেবে বন্দর শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, এটি একটি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার কৌশলগত বিষয়ও। কারণ বন্দরের সাথেই নৌ ঘাটি, তেল শোধনাগার ও বিমান বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থাপনা রয়েছে। এর ফলে জাতীয় সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার যে পটভূমি তৈরি হচ্ছে, তাতে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। বিদেশি কোম্পানিকে বন্দর ইজারা দিলে তারা পরিচালনা, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত এবং প্রবেশাধিকারসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। দেশ যদি দুর্বল হয় আর বিদেশি কোম্পানি যদি সবল হয় তাহলে জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিদেশিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে ভবিষ্যতে বন্দর নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল। এই টার্মিনাল তৈরি হয়েছে দেশের অর্থে এবং দেশের মোট কন্টেইনার পণ্য উঠানামার ৫৫ শতাংশই হয় এই টার্মিনাল দিয়ে। পণ্য উঠানামার আধুনিক সব উপকরণ ও যন্ত্রপাতি রয়েছে এই টার্মিনালে। বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে এই টার্মিনাল। ফলে এই নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দুবাইভিত্তিক কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ইজারার শর্তাবলী জনসন্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বলছে, বিদেশি অপারেটর নিয়োগে বন্দরের দক্ষতা বাড়লেও কন্টেইনার চার্জ বৃদ্ধি, শ্রমিক অধিকার সংকোচন, কৌশলগত তথ্যঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক বিরোধের আশংকা বাড়ে। এ কারণেই কি ইজারা দেওয়ার আগেই বন্দরের ট্যারিফ বাড়িয়ে দেয়া হলো, যাতে বিদেশিদের উপর দায় না পড়ে? বেসরকারিকরণের উদ্দেশ্য মুনাফা বৃদ্ধি। ফলে ইজারা দেওয়ার পর বন্দর পরিচালনার ব্যয় ২০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের হৃদপিন্ড। অথচ সেই হৃদপিন্ডকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে যেমন জিম্মি হয়ে পড়বে আমাদের দেশ, তেমনি জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের পিছনেই আছে মার্কিন সরকার কারণ এদের সাথে মার্কিন নৌবাহিনীর চুক্তি রয়েছে। ঐ চুক্তির বলে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে রি-ফুয়েলিং ও মেরামতের জন্য নোঙর করতে পারবে। যা খুবই ভয়ংকর। এটি ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নীল নকশা, এর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নেতৃবৃন্দ সরকারকে বন্দর ইজারা দেয়ার এই দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে ফিরে আসার জোর দাবি জানান।








































আপনার মতামত লিখুন :