নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু নির্বাচনের মাঠে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। আর এই লড়াইয়ে তারা যদি জয়ী হতে পারেন তাহলে তারা মর্যাদা লড়াইয়ে উত্তীর্ণ হবেন। বিপরীতে তাদের এই লড়াই মর্যাদাহানির কারণ হিসেবে আবির্ভাব হবে। এমনটাই মনে করছেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির তৃণমূল সূত্র বলছে, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের মনোনয়ন বিরোধীতায় মাঠে নেমেছেন। এই বিরোধীতায় তারা একের পর এক সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন। সেই সাথে সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে কোনো উপায়েই হোক তারা মাসুদুজ্জামান মাসুদের মনোনয়ন বাতিল করানোর লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু তাদের বিরোধীতার বিপরীতে মাসুদুজ্জামান মাসুদের মনোনয়ন দিন দিন আরও প্রবলভাবে স্থায়ী হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির বিএনপির এই তিন নেতারা বিরোধীতা যেন কর্ণপাতই করছেন না। ফলে দিনশেষে হয়তো এই তিন নেতার নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে মর্যাদাহানি ঘটতে যাবে।
জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে প্রার্থীর নাম রয়েছে। গত ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তালিকা প্রকাশ করেন।
নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে মাসুদুজ্জামান মাসুদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই ঘোষণার পর থেকেই মাসুদুজ্জামান মাসুদকে আবুল কালাম, সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু মেনে নিতে পারছেন না। তারা একের পর এক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের প্রার্থীতা বাতিলের দাবীতে এক টেবিলে বসেছিলেন মহানগর বিএনপি সহ অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে তারা সকলেই একসাথে বসে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রার্থীতা বাতিলের দাবী জানিয়েন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা সহ আরও অনেকেই। উপস্থিত সকলেই মনোনয়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
একই সাথে গত ১৭ নভেম্বর এসকল নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শোডাউন দিয়েছেন। যদিও তাদের শোডাউন ছিলো কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের নাশকতা প্রতিরোধ। কিন্তু অন্তরালে ছিলো মাসুদুজ্জামান মাসুদের বিরুদ্ধে নিজেদের জানান দেয়া।
যদিও তাদের মান ভাঙ্গানোর জন্য মাসুদুজ্জামান মাসুদ নানাভাবে চেষ্টা করে আসছিলেন। দফায় দফায় তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ সহ নানাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন। কিন্তু তারপরও যেন তাদের মন রক্ষা করতে পারছেন না মাসুদ।
এর আগে গত ১৪ জুন মেজবান তথা ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করেছেন মাসুদ। সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। সেই সাথে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাসুদুজ্জামান তার নির্বাচনের বাসনা জানিয়েছিলেন। আর তার সমর্থনে বিএনপির একটি বিশাল অংশ মাঠে সক্রিয় ছিলেন। যারা মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন প্রাপ্তিতে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছিলেন।
তবে মাসুদুজ্জামানের এই সক্রিয়তায় বিরোধীতা করে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা বিএনপির প্রবীণ নেতারা। মাসুদুজ্জামানের কারণে তাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাই তাকে মেনে নিতে পারছিলেন না। তারা আগে থেকেই বিরোধীতা করে আসছিলেন।
বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু মাসুদুজ্জামান মাসুদের বিপরীতে অবস্থান করে আসছিলেন। সেই সাথে একের পর এক মহানগর বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত বিভিন্ন সভা সমাবেশে বেশ শক্তভাবে মাসুদুজ্জামান মাসুদের বিরোধীতা করে আসছিলেন।
কিন্তু তাদের এই বিরোধীতাকে প্রাধান্য না দিয়েই গত ২২ সেপ্টেম্বর মাসুদুজ্জামান মাসুদকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বিএনপিতে যোগদান করানো হয়। যে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর বিরোধীতা সত্বেও মাসুদুজ্জামানকে সাদরে গ্রহণ করা হয়। সেই সাথে এবার তাকে দলীয় মনোনয়নও দেয়া হয়।
কিন্তু এবারও মাসুদুজ্জামান মাসুদের দলীয় মনোনয়নের বিরোধীতা করে আসছেন মহানগর বিএনপির নেতারা। তাদের সাথে অভিভাবক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিপরীতে তাদের এই বিরোধীতা কতটুকু সফলতার মুখ দেখবে সেটাই পরিলক্ষিত বিষয়। আর যদি তারা সফল না হতে পারেন তাহলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে বিএনপিতে।








































আপনার মতামত লিখুন :