নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে একজন আলোচিত সমালোচিত নেতা হলেন অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তিনি আন্দোলন সংগ্রামে একজন সংগ্রামী নেতা। সবকিছুতেই তিনি সকলের আগে প্রতিবাদ করে থাকেন। জোরালো ভূমিকা পালন করে থাকেন। একই সাথে তিনি আবার আপোষকামী নেতা। তিনি যেমন সবকিছুর প্রতিবাদ করে থাকেন একইভাবে সহজে আবার আপোষ করে ফেলেন।
বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগসট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের দোসর ইস্যুতে তিনি সরব ভূমিকা পালন করে আসছেন। প্রায় সকল সভা সমাবেশেই আওয়ামী লীগের দোসর নিয়ে তিনি জোরালোভাবে বক্তব্য দিয়ে আসছে। একই সাথে প্রশাসনিক বিভিন্ন সভা সমাবেশেও এই দোসরদের ব্যাপারে প্রসাসনকে সতর্ক থাকার কথা বলছেন। আবার সেই তিনিই আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দেয়া লোকদের সাথে আপোষ করছেন।
সবশেষ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর গ্রেপ্তার চেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। গত ২ ডিসেম্বর বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে মতবিনিময় কালে এই মন্তব্য করেন তিনি।
টিপু বলেন, সে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করে। গত ২৯ নভেম্বর বক্তাবলীতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পোগ্রাাম করে ঘোষণা দিয়েছে সে নির্বাচন করবে। ও একটা বাটপার, ১৯৭১ সালে ডাকাতির সাথে জড়িত। ওরে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক। প্রত্যেকটা যায়গা থেকে তারে বয়কট করা হোক। যদি আপনারা না করেন তাইলে আমরা বয়কট করবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা ৭১ দেখিনাই কিন্তু ২৪ দেখেছি। আন্দোলন সংগ্রাম যে কত কষ্টের তা আমরা জানি। রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন জায়গায় আমরা রাত্রিযাপন করেছি, সেই দিনগুলোর কথা আমরা ভুলবো না। ফ্যাসিস্টের দোসরকে যদি আপনারা প্রশ্রয় দেন, লালন পালন করেন, এর চেয়ে বড় দুঃখের আর কিছু নেই। মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় সংসদের সাথে আলোচনা করে নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে তাকে বাদ দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
এর আগে নারায়ণগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে জেলা পরিষদের উদ্যোগে আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করা হয়। গত ২৪ মার্চ দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তৎকালিন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেন।
এসময় নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলীও উপস্থিত ছিলেন। সেই সাথে তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে ‘জয়বাংলা’ বলে বক্তব্য শেষ করেন। আর এই বিষয়টি নিয়ে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু জোড়ালোভাবে প্রতিবাদ জানান। সেই সাথে তিনি বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে বিষেদগার করতে থাকেন।
কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই মোহাম্মদ আলীর সাথেই আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে দেখা যায়। মোহাম্মদ আলীকে তিনি রাজনৈতিক গুরু হিসেবেই শ্রদ্ধা করেন। সেই সম্পর্কের মধ্যেই আবার আবু আল ইউসুফ খান টিপু মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
এদিকে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানের গ্রেপ্তার দাবি করেছিলেন অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। গত ৯ নভেম্বর বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এই দাবী করেছিলেন।
সভায় আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, আমি আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেলিম ওসমানের গ্রেপ্তার দাবি করছি। শুধু সেলিম ওসমান নয়, বৈষম্য বিরোধী হত্যার সাথে যারা সুনিদিষ্টভাবে জড়িত আছে, যারা এখনো নারায়ণগঞ্জে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য মশাল মিছিল, আগুন নিয়ে মিছিল এই অর্থ তারা কোথায় পায়। রাতের বেলায় ছেলে পেলে জোগাড় করার জন্য যে পরিবহন ব্যবস্থা সেই অর্থ তারা কোথায় পায়? এই অর্থ দাতা হলো সেলিম ওসমান এবং এই সেলিম ওসমানের সাথে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যারা জড়িত ছিল তারা এখনো আছে। তারা এসব অর্থদাতা। সেলিম ওসমান সহ এসব অর্থদাতাদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তবে এই সেলিম ওসমানের ব্যাপারে আবু আল ইউসুফ খান টিপু যতটা সোচ্চার অন্যদের বেলায় এতটা সোচ্চার পরিলক্ষিত হয় না। টিপু একাই কয়েকদিন পরপর এই সেলিম ওসমানের গ্রেপ্তার দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠছেন।
অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে প্রার্থীর নাম রয়েছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তালিকা প্রকাশ করেন।
নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে মাসুদুজ্জামান মাসুদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণাতেও মাসুদুজ্জামান মাসুদকে সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু মেনে নিতে পারছিলেন না। বিভিন্নভাবে বিরোধীতাই করে আসছিলেন। মাসুদুজ্জামান আলোচনায় তিনি বিভিন্ন সভা সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিরোধীতা করে আসছিলেন। যেন কোনোভাবেই মাসুদুজ্জামানকে মেনে নিতে রাজী ছিলেন না।
কিন্তু আবু আল ইউসুফ খান টিপু সকল বিরোধীতার অবসান ঘটিয়ে ফেলেন গত ২৭ নভেম্বর শহরের ররফকল মাঠে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের পক্ষে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায়। বিরোধীতাকারী অন্য সকল সঙ্গীদের ফেলে তিনি একাই মাসুদুজ্জামানের বলয়ে যোগ দেন। সেই সাথে একের পর এক মাসুদুজ্জামানের সভা সমাবেশে হাজির হতে থাকেন। যা বিএনপিতে অনেক আলাপ আলোচনা সৃষ্টি করে।








































আপনার মতামত লিখুন :