News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২

এটিএম কামালে বিএনপির নতুন মোড়


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম এটিএম কামালে বিএনপির নতুন মোড়

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালে যেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির রাজনীতির নতুন মোড় নিয়েছে। এটিএম কামালকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে মহানগর বিএনপির একটি বলয় গড়ে উঠেছে। সেই সাথে তার নেতৃত্বে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও ভরসা খুঁজে পাচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছেন।

সবশেষ ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ব্যানারে এই প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদ সভায় নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের বিএনপির মনোনিত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান উপস্থিত হয়েছিলেন।

একই সাথে প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ, মহানগর কৃষক দলের সভাপতি এনামুল খন্দকার স্বপন ও সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। উপস্থিত সকলেই প্রায় প্রভাবশালী নেতা।

তবে এই কর্মসূচির বাইরে ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। কিন্তু তাদের উপস্থিতি ছাড়াই মহানগর বিএনপির ব্যানারে কর্মসূচি নেতাকর্মীদের পরিপূর্ণ উপস্থিতির মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে একটি নতুন বার্তা হিসেবে বহন করছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে এটিএম কামালকে ঘিরে।

জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির রাজনীতিতে অনেক বহিস্কৃত নেতাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও অনেক বিএনপি নেতার বহিস্কার প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় নানা কাঠখড় পুড়িয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে এটিএম কামাল বিএনপির রাজনীতিতে ফিরেছেন।

গত ২৬ নভেম্বর এটিএম কামালের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয় বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত চিঠিতে সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দলের সদস্য পদ ফিরে পাবার গত ১০ ডিসেম্বর রাতে দেশে ফিরলেন কামাল। তিনি দেশে ফেরার সাথে সাথেই মহানগর বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নতুন উদ্যোমে জেগে উঠেছেন।

শহরের মিশনপাড়া এলাকার এটিএম কামালের বাসা সোনারগাঁও ভবনে সবসময় নেতাকর্মীদের নেতাকর্মীদের ভীড় লেগেই রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই এটিএম কামালের নির্ঘুম দিন কাটছে। সেই সাথে তাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের তৎপরতা বেড়েই চলছে।

এর আগে ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে বহিস্কার করা হয়। 

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে বহিস্কার করা হলো।

তার আগে এটিএম কামাল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ করেন। সেই সাথে তিনি বেশ সক্রিয়ভাবেই কাজ করেন। তৈমূরের প্রধান এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৈমূরের প্রত্যেক গণসংযোগে এটিএম কামাল হাজির হয়েছেন এবং প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন।

আর এটাই হয়তো তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। দল থেকে নির্দেশনা ছিল তৈমূরের পক্ষে কাজ না করার জন্য। কিন্তু তিনি সেই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করেই তৈমূরের পক্ষে কাজ করেছেন। পরণতিতে তিনি বিএনপি থেকে বহিস্কার হয়েছেন।

আর এই বহিস্কারের পরপরই তিনি অনেকটাই নিরব হয়ে যান। নিজের মধ্যেই সকল অভিমান জমা রেখে নিরব থেকেছেন। কারও বিরুদ্ধে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। আর সেই অভিমানকে সঙ্গে নিয়েই ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি আমেরিকার উদ্দেশ্য দেশ ছাড়েন। তবে এই বহিস্কারে তিনি কখনও দল কিংবা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেননি বা অভিযোগ করেননি। নিজের মধ্যেই যত অভিমান ক্ষোভ জমা রেখেছেন।

নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার বাইরে চলে যায় বিএনপি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফের ক্ষমতার বাইরে চলে যায় বিএনপি। এরপর আবার ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতায় বাইরে থেকে যায় বিএনপি।

টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকাবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক মামলায় কাবু হয়ে হয়ে পড়েন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। একের পর এক মামলায় জড়িয়ে তাদেরকে দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় কিংবা পরিবার পরিজন ছাড়া অন কোথাও দিন কাটাতে হয়। অন্যথায় কারাগারই তাদের ঠিকানা হয়ে যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন এটিএম কামাল।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ রাজপথের অন্যতম সৈনিক ছিলেন এটিএম কামাল। তৎকালীয় সময় তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় দলীয় প্রত্যেক কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের নিয়ে তার সরব উপস্থিতি থাকতো। পুলিশের হামলা-মামলাও রুখতে পারেন নি তাকে। একের পর এক মামলায় জেল খেটেছেন বহুবার। তারপরেও তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি।

Ad Placement 1
Ad Placement 2
Islam's Group