News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২

তিনি ছিলেন দুই নৌকার মাঝি : সাবেক কাউন্সিলর খোকন সৌদিতে


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫, ০৯:৫৭ পিএম তিনি ছিলেন দুই নৌকার মাঝি : সাবেক কাউন্সিলর খোকন সৌদিতে

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক ও (নাসিক) ১০নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন। এই নেতার দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক পথচলায় সাবেক সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের আস্থার মানুষ হিসেবে রাজপথ চষে বেড়ালেও মূলত তিনি ছিলেন দুই নৌকার মাঝি। খোকন উপরে উপরে শামীম ওসমানের অনুসারী হিসেবে প্রচার চালালেও ভেতরে তিনি আজমেরীর হয়ে বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিতেন। নিজে ওসমানের সঙ্গে মিশে থেকে ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে ভাতিজার বলয়ে রেখেছেন।

খোকন কাগজে কলমে কাউন্সিলর হলেও তার ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রক ছিলেন তারই অতিবঘনিষ্ঠ সহযোগী সাবেক ১০নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী আমির। মূলত ওয়ার্ডের সকল কার্যক্রম পরিচালনা আমিরের মাধ্যমে হতো। আর এই আমিরের পরিচয় হচ্ছে তিনি আজমেরী ওসমানের বিশ্বস্ত চার খলিফার একজন। অস্ত্রবাজি, মাদক কারবার, ভূমিদস্যুতাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এলাকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েমে তার ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। যার সেল্টারদাতা ছিলেন কাউন্সিলর খোকন ও আজমেরী ওসমান।

নারায়ণগঞ্জের গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের সঙ্গে তারই বড়ভাই মৃত নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের বনিবনা নেই। বলা চলে তারা একেঅন্যের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আচরণে জেলাজুড়ে আলোচিত। ফলে তাদের অনুসারীরাও গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত। তবে এক্ষেত্রে কাউন্সিলর খোকন ছিলেন ভিন্ন কৌশলী। তিনি নিজে শামীম ওসমানের আস্থাভাজন হয়ে রাজনীতি করলেও নিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাজী আমিরকে আজমেরীর বলয়ে রেখে দুই পক্ষেরই সুবিধাভোগ করতেন। বিগত আওয়ামী শাসনামলের ২০১৬ সাল হতে ১০নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ানম্যান আর্মি হয়ে উঠেন।

এদিকে দীর্ঘ লম্বা সময়ের রাজনীতির প্রতিদানস্বরুপ আওয়ামী লীগও তাকে কম পুরস্কৃত করেনি। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে এসে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক, মহানগর কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং টানা দুইবার ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হয়েছে। যার পুরো কৃতিত্বই গডফাদার শামীম ওসমানের।

২০১৬ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন ইফতেখার আলম খোকন। যদিও এর আগ থেকে এলাকব্যাপী তার বিরাট দাপটে বাহিনী গড়ে উঠেছিল। তবে কমিশনার হতেই অবস্থান আরও পোক্ত বনে যায়। এরপর থেকে সর্বসেক্টরে আমিরকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়ে দেন। আর সেই গুরুদায়িত্বটাও নিজ সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা ভালো চালিয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে ওসমানের ছায়ার জোরে ২২ এর নির্বাচনেও খোকন ফের জয়ী হন। আর এই দ্বিতীয়বারের বিজয় তাকে আরও বেপরোয়া করে তোলে। তিনি নিজ দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়ে পড়েন,যার ফলে দলীয় অন্তকোন্দল সৃষ্টি হতে দেখা গিয়েছিল।

খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে নির্বাচিত হয়েই সাবেক কাউন্সিলর মতির আস্তানায় থাবা দেন খোকন। মতির সহযোগীরা শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে পদ্মা ডিপুর যাতায়াতকারী তেলের জাহাজ হতে নৌকার মাধ্যমে যে চোরাই তেল নামানোর ব্যবসা করতো তা নিজের দখলে নিয়ে নেন। যা নিয়ে মতির সঙ্গে তার চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও শীতলক্ষ্যা নদী ঘেঁষে অবৈধ ডেজার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েও তাদের ঝামেলা চলছিল। একপর্যায়ে শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপে ভাগাভাগির মাধ্যমে সমাধান ঘটে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, শামীম ওসমানের বিশ্বস্তজনের তালিকায় খোকনের নাম উঠেছে আইভী বিরোধিতার ফলে। সে ২০১৬ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হলেও মেয়র আইভীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেনি। ওসমানকে খুশি রাখতে যেকোনো রাজনৈতিক প্রোগ্রামে আইভীকে একহাত শোনানোর প্রতিযোগিতায় ছিলেন।

সূত্রমতে, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতনের পর প্রায় ২ মাসে খোকন ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। একপর্যায়ে কোনো এক দালালের মাধ্যমে লেবার ভিসা নিয়ে দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে চলে গেছেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। খোকনের মতো তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাজী আমিরও দেশ ছেড়েছেন। তবে আমিরের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, কাউন্সিলর খোকনের মা একজন শিক্ষক ছিলেন। যার ফলে মায়ের সম্মান বিবেচনায় জনগণ তাকে নির্বাচিত করেছেন। তিনি প্রথমবার কাউন্সিলর হয়ে নিজো জনসেবার অভিনয় করলেও তার সহযোগীদের দ্বারা সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।

Ad Placement 1
Ad Placement 2
Islam's Group