শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার দিন মা দুর্গার অপর নামে কুমারীর নামকরণ করা হয় অপরাজিতা। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে মহাষ্টমীতে দেবীরূপে মানবীর মঞ্চে অধিষ্ঠিত হবেন মাত্র সাত বছর বয়সী রাজশ্রী ভট্টাচার্য্য। কুমারী বেশে সেই মহামায়াকেই মাতৃজ্ঞানে পূজা করবেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা শত শত ভক্ত। শহরের রামকৃষ্ণ মিশনে প্রতিবছরের মত এবারও শারদীয় দুর্গোৎসবের মহা অষ্টমীর দিন এই ঐতিহ্যবাহী কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী মহারাজ একনাথনন্দ এই মহতি আয়োজনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যে কিশোরীকে দুর্গা প্রতিমার দেবীজ্ঞানে পূজা করা হবে, সেই পূজার আসনে বসছেন মাত্র ৭ বছর বয়সী রাজশ্রী ভট্টাচার্য্য। রাজশ্রীকে পূজার মন্ডপে তুলে এনে ষোড়শ উপাচারে পূজা করা হবে। তার এই দেবীরূপে প্রকাশকে ঘিরে তার পরিবার এবং স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহের বাঁধ ভেঙেছে। রাজশ্রী ভট্টাচার্য্য নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ আখড়া এলাকার ফটো সাংবাদিক পাপ্পু ভট্টাচার্য্য ও স্বর্না ভট্টাচার্য্যরে মেয়ে। সে মোদগুল্লো গোত্রের এবং নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।
স্বামী মহারাজ একনাথনন্দ জানান, নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভক্তবৃন্দরা এই পূজায় অংশ নেবেন।
রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী মহারাজ একনাথনন্দ কুমারী পূজার গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, “নারী মানে মায়ের প্রতীক। কুমারী পূজা মানে স্বয়ং মাকে পূজা করা। আমরা একজন কুমারীকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করি, কারণ এই ধরণীর সকল নারীর মাঝেই দেবী দুর্গার দিব্যরূপ ও শক্তি বিদ্যমান। এই পূজা মূলত নারীর প্রতি সম্মান এবং মাতৃশক্তির চিরন্তন সত্যের প্রতীকী উপাসনা।”
স্বামী একনাথানন্দ আরো বলেন, স্বামী বিবেকানন্দ শারদীয় দুর্গোৎসবে এই কুমারী পূজার প্রচলন করেন। কুমারী শিশুর মাধ্যে দুর্গা মায়ের অর্ভিভাব হয়। জগতের সকল মাকে সম্মান প্রদানের লক্ষ্যেই কুমারী পুজা করা হয়। ১৯১০ সাল থেকে রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গাপুজা ও কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রামকৃষ্ণ মিশনে অষ্টমী পূজা শুরু হয় সকাল সোয়া ৮টায়, সন্ধিপূজা হবে রাতে।
এই মহোৎসবকে কেন্দ্র করে মিশনের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। বিপুল সংখ্যক ভক্তের আগমনকে সামনে রেখে ম-পে নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১৬ টি উপকরণ দিয়ে পূজার কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস এই পাঁচ উপকরণ দেয়া হয় কুমারী মায়ের পূজায়। এগুলো দেয়ার পর দেবীর গলায় পুষ্পমাল্য পরানো হয়। পূজার শেষে প্রধান পূজারি দেবীর আরতি নিবেদন করে দেবীকে প্রণাম করবেন। পূজার মন্ত্র পাঠ করে ভক্তদের মধ্যে চরণামৃত বিতরণের মধ্যে দিয়ে ১ঘণ্টা পর শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। দুপুরে পূজার্থী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
মহাসপ্তমীতে বিভিন্ন পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে ভক্তিমূলক গান ও পূজার আরতি। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি পূজা মন্ডপে ছিলো দর্শনার্থীদের প্রচন্ড ভীড়।
আপনার মতামত লিখুন :