বন্দর উপজেলার সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের সুর্নিদিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন ২০২৪ সালে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাথে সখ্যতা, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করার। ২০২৪ সালে এসব অভিযোগে দল বহিষ্কার হওয়ার পর এতোদিন তিনি বহিষ্কৃত নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। সম্প্রতি দল থেকে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আর তার এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ।
প্রায় একবছরের বেশি সময় পর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর আবারো আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করেছে সদ্য বহিষ্কার প্রত্যাহার হওয়ার আতাউর রহমান মুকুল।
সোমবার সন্ধ্যায় তার বাসায় এসে ফুল দিয়ে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন ধামগড় ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার ও শেখ রাসেল ক্রীড়া একাডেমির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান। যে কিনা বৈষম্য বিরোধী একাধিক মামলার আসামি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য একাধিকবার তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সেই আওয়ামী লীগে পদধারী নেতার হাত থেকে ফুল নিয়ে তাকে রাজনীতিতে পুর্নপ্রতিষ্ঠা করার অভিযোগ উঠেছে আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে।
সোমবার সন্ধ্যায় আতাউর রহমান মুকুলের নবীগঞ্জের বাসায় এসে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে সমালোচনা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, আতাউর রহমান মুকুলকে সেলিম ওসমানের নির্বাচনে কাজ করার সুনিদিষ্ট অভিযোগে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সে সাবেক এমপি আবুল কালামের ভাই ও জালাল হাজীর পরিবারের সদস্য হলেও তার জন্য এই পরিবারের কেউ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেননি। কিন্তু বিএনপি থেকে যাকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনীত করেছেন, তার বিরুদ্ধে ওসমান পরিবার ও আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে বেশ জোড়ালো ভাবে। মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দরাও এই অভিযোগ করেছে বেশ তীব্র ভাবে। সেই মাসুদুজ্জামান মাসুদের কারিশমায় আতাউর রহমান মুকুলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হতে না হতেই আতাউর রহমান মুকুল নিজের পুরোনো প্রভুদের সহযোগিদের রাজনীতিতে পুনপ্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছে।
তথ্য মতে, আতাউর রহমান মুকুল বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামী লীগ শাসনামলে। সবশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি থেকে বয়কট করা হলেও আতাউর রহমান মুকুল অন্তরালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানের জন্য মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। মিছিলে লোক দেওয়া থেকে শুরু করে কেন্দ্র দখল পর্যন্ত সকল কাজেই ভূমিকা রেখেছেন আতাউর রহমান মুকুল।
যার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র সকল সদস্যপদ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার সাথে সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু, মহানগর বিএনপি নেতা হান্নান সরকার সুলতান আহমেদ, গোলাম নবী মুরাদ ও সোনারগাঁ বিএনপির মো. নুরুজ্জামানকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ.কে.এম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির এই ছয় নেতা। বিএনপির রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে বিএনপি'র ডাকা সরকার পতনের আন্দোলনে অংশ না নিয়ে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার অপরাধে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলের হাইকমান্ড।
তবে আতাউর রহমান মুকুল বহিষ্কৃত হওয়ার পূর্বেও করেছেন সংগঠন বিরোধী নানা বির্তকিত কর্মকান্ড। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আগের কমিটিকে বিলুপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটিতে ১০ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে। বাকিরা সদস্য হিসেবে আছেন। ঘোষিত নতুন কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তারা হলেন, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবীর, আবদুস সবুর সেন্টু, হাজী নূর উদ্দিন, আতাউর রহমান মুকুল, মনির হোসেন খান, আনোয়ার হোসেন আনু, ফতেহ মো. রেজা রিপন, এম এইচ মামুন ও আবুল কাউসার আশা।
সেই কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে ওই সময় কমিটির নেতৃবৃন্দকে বেকায়দায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। যার পুরো কলকাঠি নেড়েছিলেন এই আতাউর রহমান মুকুল, এমনটাই অভিযোগ উঠেছিলো সে সময়।








































আপনার মতামত লিখুন :