News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

আওয়ামী লীগকে কাছে চান কাশেমী, সখ্যতা বজায় অনুসারীদের


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ১০:১৪ পিএম আওয়ামী লীগকে কাছে চান কাশেমী, সখ্যতা বজায় অনুসারীদের

বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর যেন ভরসা হারিয়ে ফেলছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। আর তাই এবার আওয়ামী লীগের লোকজনদেরও কাছে টানার চেষ্টা করছেন। এতদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের সমর্থন পাওয়ার আশায় বিএনপির প্রতি মায়া দেখানোর চেষ্টা করলেও এবার আওয়ামী লীগ নিয়েও মায়া দেখানোর চেষ্টা করছেন। তাদেরকে ভালো হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নিজে কাছে নেয়ার করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত, নিরাপদ ও আধুনিক নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভোলাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে এক নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করা হয়। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) কাশিপুর ৭নং ওয়ার্ড ‘কাশেমী পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এই জনসভার আয়োজন করা হয়।

আর এই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মুফতি মনির হোসেন কাসেমী বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার গত ১৭ বছরের শাসনামলে যারা হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের কেউ সরিয়ে দিতে পারবে না। এই অবস্থানে আসা সহজ ছিল না এতে ত্যাগ আছে, সংগ্রাম আছে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনে একটি রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মনির হোসাইন কাসেমী বলেন, ‘বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকেও যারা কোন অপরাধ করেননি এমন সাধারণ ব্যক্তিদের কোন ভয় নেই। তারা নির্ভয়ে চলতে পারবেন। তারা জামাই আদরে থাকবেন। তবে যারা মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অন্যায় অপরাধ করেছেন তাদের কাউকে রেহাই দেয়া হবে না। অবিলম্বে আওয়ামী লীগের সেই সব অপরাধীদের আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করে তওবা করতে হবে’।

তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলন, শাপলা চত্বরসহ দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আলেম সমাজ সামনের সারিতে ছিল। এলাকায় মানুষ দুই ভাগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। যারা আওয়ামী লীগের নামে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেছে তাদের কোনো ছাড় নেই। তবে যারা ভালো, তাদের ভয়ের কিছু নেই।

কাশেমীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী হলেন ফেরদাউসুর রহমান যিনি বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের শামীম ওসমানের পক্ষ নিয়েছেন। নিয়মিত তিনি শামীম ওসমানের ক্যাডার শাহ নিজামের ডেরায় যেতেন। বিভিন্ন ইস্যুতে তৎকালীন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে সভা সমাবেশ ও হাত পা ভেঙে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেওয়ারও হুমকি এসেছিল। সরকারী জায়গা দখল করে নির্মিত নম পার্কের রাহবার নিজামের ডেরায় বসে দিনরাত কূটকৌশল করে শামীম ওসমানের ‘ছোট ভাই’ উপাধি পাওয়া নেতারা এখন মিশে যাচ্ছে বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে। ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনে কঠোর ভূমিকা রেখে নারায়ণগঞ্জে বেশ আলোচিত একজন হয়ে ওঠেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। ধীরে ধীরে সংগঠনের আদর্শ উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন প্রভাবশালী এমপি বর্তমানে পলাতক শামীম ওসমানের পারপাস সার্ভ করতে কাজ করে যান তিনি। শামীম ওসমানের হয়ে তার প্রতিপক্ষ নাসিকের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে ঠেকাতে কাজ করেন তিনি। পর্দার আড়ালে শামীম ওসমানের হুকুম তামিল করতে ঝাপিয়ে পড়েন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। ধীরে ধীরে সেইসব পর্দার অন্তরালের বিষগুলো শামীম ওসমানের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। শামীম ওসমান প্রকাশ্যেই নিজেই ঘোষণা করেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান তার ছোট ভাই। সেই ফেরদাউসুর রহমান আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের ব্যানার নিয়ে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করতেও দ্বিধাবোধ করেননি।

ভূমিকা রাখেন সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনে। নির্বাচনে প্রথমে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান। কিন্তু জাকির হোসেনও নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আগ্রহী ছিলেন। এতে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের সঙ্গে মধ্যস্ত করেন ফেরদাউসুর রহমান। মাঝখানে কাজে লাগান অস্ত্রধারী ক্যাডার শাহ নিজামকে। এ নিজামের পরিচালনাধীন নম পার্কে নিয়মিত আড্ডা বসাতেন তিনি। ছিলেন বুলবুল নামের একজন জমির দালাল। মতিউর রহমানকে চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো হয়। মতি তখন নিজকে অসুস্থ দাবি করে নির্বাচন থেকে সরে যান। দ্বিতীয় দফায় কৌশলে জাকির হোসেনের জন্য নৌকা প্রতীকে এনে দেন শামীম ওসমান। জাকির হোসেনের ওই নির্বাচনে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা প্রতীকে মনোনযন জমা দেন জাকির হোসেন। নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নিয়ে জাকির হোসেনের নৌকার পক্ষে শোডাউন করেন এবং নির্বাচনী কাজ করেন।

সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে তেমন একটা নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হতে হয়নি।

এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। এই অবস্থায় বিএনপি সহ অনেক রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের জানান দিতে থাকেন।

তারই অংশ হিসেবে বিএনপির শরীক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীও বিভিন্ন সভা সমাবেশের মধ্য সরব হতে থাকেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এলাকায় একের পর এক সমাবেশ করে বেড়ান। আর প্রত্যেকটি সভা সমাবেশেই নিজেকে বিএনপি প্রেমিক হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। কোনো কোনো বক্তব্যে নিজের দলের থেকে বিএনপিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের ৪ টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণা দেয়া হলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণা দেয়া হয়নি। যার কারণে মনির হোসেন কাসেমীর অনুসারীরা ধরে নিয়েছেন তার জন্য এই আসনটি ছাড় দেয়া হবে।

তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর গেজেট জারি করেছে সরকার। এতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বিধান যুক্ত করা সহ বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। যেখানে জোটগত নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে ভোট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আ এই আদেশ জারিতে মনির হোসেন কাসেমীকে নিজ দলীয় প্রতীক খেজুর গাছ প্রতিকেই নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় তাকে নিজ দল ত্যাগ করতে হবে। এমনটা গুঞ্জনও রয়েছে।

একই সাথে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী এতদিন ধরে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের মন জয় করার জন্য নানাভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের থেকেও তিনি যেন বেশি বিএনপিকে ভালোবাসেন সেটা প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।

সবশেষ গত ১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে কাসেমী পরিষদ আয়োজিত ‘আজমাতে সাহাবা’ নামে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা জমিয়তে ওলামা ইসলামের সভাপতি মুফতি মাওলানা মনির কাশেমী।

আজমতে সাহাবা নামে সমাবেশের আয়োজন করা হলেও বিএনপির নেতাদেরই আধিক্য ছিলো বেশি। জমিয়ত নেতাদের চাইতে বিএনপির নেতার্মীদের উপস্থিতিই ছিলো বেশি। মঞ্চ ছিলো বিএনপির নেতাদের দ্বারা পরিপূর্ণ। একই সাতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

কিন্তু ধানের শীষ প্রতিক না পেলে তার সকল চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হবে। হয়তো বিপুল ভোটের ব্যবধানে তাকে পরাজয় বরণ করতে হবে। আর তাই এবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও কাছে টানার চেষ্টা করছেন মনির হোসাইন কাশেমীকে। যেন তাদের ভোটগুলো নিজের বাক্সে পরে।

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শুরু থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ সংসদীয় এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরাসহ প্রায় সকলেই নিশ্চিত ছিলেন এই আসনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপির প্রার্থীকেই ধানের শীষের প্রতিক দেয়া হবে। কিন্তু চূড়ান্ত বাছাই পর্বে হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসেন জমিয়ত উলামার মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মনির হোসাইন কাশেমী। সেই সাথে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে দিনভর নানা জল্পনার পর বিকেলে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় ধানের শীষের মনোনয়ন পত্র।

Islam's Group