News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

কামাল-খোরশেদের সক্রিয়তা : দুই নেতাকে কর্মীরা চায়, নেতারা না


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ১০:২৪ পিএম কামাল-খোরশেদের সক্রিয়তা : দুই নেতাকে কর্মীরা চায়, নেতারা না

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বর্তমান রাজনীেিত মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জাগরণ চাচ্ছে না বিএনপির একটি পক্ষ। বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে অনেক বহিস্কৃতরা ফিরলেও সকল বাধা যেন এটিএম কামালের বেলায়। তাকে এখনও বিএনপির রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না।

সেই সাথে মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাকছুদুল আলম খোরশেদকেও সামনে আগাতে দেয়া হচ্ছে না। তাদেরকে যেন নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের কাছের লোকরাই এই বাধার পিছনে কাজ করছেন। কারণ এই দুইজন বিএনপির রাজনীতিতে ফিরলে মাসুদুজ্জামানের জন্য সুবিধা হলেও বিপাকে পরবেন তার কাছের লোকেরা।

আর তাই একের পর এক বিএনপির বহিস্কৃতরা বিএনপিতে ফিরলেও এটিএম কামাল এখনও দলে আসতে পারছেন না। একই সাথে মাকছুদুল আলম খোরশেদকেও সামনে আগাতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ এই দুইজন বিএনপির দুঃসময়ের কান্ডারী ছিলেন। দেশের কোথাও কোনো আন্দোলন না হলেও নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন কর্মসূচি পালন হতো তাদের নেতৃত্বে। আর এই আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেকবার তাদের গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করতে হয়েছে।

বহুবার পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও তাদের কারণে নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। অনেক সময় জেল জুলুমেরও শিকার হয়েছেন। তারপরও তাদের দলীয় আন্দোলন সংগ্রাম থেকে দমানো সম্ভব হয়নি।

জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির রাজনীতিতে অনেক বহিস্কৃত নেতাদের ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও অনেক বিএনপি নেতার বহিস্কার প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু এখনও বহিস্কারের কালিমা মোচন করতে পারছেন না মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। সেই সাথে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদেরও কোনো মূল্যায়ণ হচ্ছে না।

এর আগে ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে বহিস্কার করা হয়। 

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে বহিস্কার করা হলো।

তার আগে এটিএম কামাল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ করেন। সেই সাথে তিনি বেশ সক্রিয়ভাবেই কাজ করেন। তৈমূরের প্রধান এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৈমূরের প্রত্যেক গণসংযোগে এটিএম কামাল হাজির হয়েছেন এবং প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন।

আর এটাই হয়তো তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। দল থেকে নির্দেশনা ছিল তৈমূরের পক্ষে কাজ না করার জন্য। কিন্তু তিনি সেই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করেই তৈমূরের পক্ষে কাজ করেছেন। পরণতিতে তিনি বিএনপি থেকে বহিস্কার হয়েছেন।

আর এই বহিস্কারের পরপরই তিনি অনেকটাই নিরব হয়ে যান। নিজের মধ্যেই সকল অভিমান জমা রেখে নিরব থেকেছেন। কারও বিরুদ্ধে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। আর সেই অভিমানকে সঙ্গে নিয়েই ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি আমেরিকার উদ্দেশ্য দেশ ছাড়েন। তবে এই বহিস্কারে তিনি কখনও দল কিংবা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেননি বা অভিযোগ করেননি। নিজের মধ্যেই যত অভিমান ক্ষোভ জমা রেখেছেন।

এই ঘটনার সাথে সাথে মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদেরও বিএনপিতে মূল্যায়ন কমে যায়। বিএনপির রাজনীতিতে তাকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না।

নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার বাইরে চলে যায় বিএনপি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফের ক্ষমতার বাইরে চলে যায় বিএনপি। এরপর আবার ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতায় বাইরে থেকে যায় বিএনপি।

টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকাবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক মামলায় কাবু হয়ে হয়ে পড়েন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। একের পর এক মামলায় জড়িয়ে তাদেরকে দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় কিংবা পরিবার পরিজন ছাড়া অন কোথাও দিন কাটাতে হয়। অন্যথায় কারাগারই তাদের ঠিকানা হয়ে যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন এটিএম কামাল।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ রাজপথের অন্যতম সৈনিক ছিলেন এটিএম কামাল। তৎকালীয় সময় তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় দলীয় প্রত্যেক কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের নিয়ে তার সরব উপস্থিতি থাকতো। পুলিশের হামলা-মামলাও রুখতে পারেন নি তাকে। একের পর এক মামলায় জেল খেটেছেন বহুবার। তারপরেও তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি।

একইভাবে তৎকালিন সময়ে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক ও সভাপতি ছিলেন মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। আর এই দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিএনপি দলীয় প্রত্যেক আন্দোলন সংগ্রামে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিলো।

কিন্তু বর্তমান বিএনপির রাজনীতিতে এই এটিএম কামাল ও মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বিএনপিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের কাছের লোকরাই তাদেরকে পিছিয়ে রাখছেন। তাদের সামনে আসার সুযোগ দিচ্ছেন না। অথচ তাদের থেকে গুরুতর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেও আবারও বিএনপির রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন। সরাসরি ধানের শীষ প্রতিকের বিরোধীতা করেও তারা বিএনপির রাজনীতিতে ফিরে আসছেন।

Islam's Group