নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত চিঠিতে সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কামাল। তিনি বলেন, আমি আমার বাকি জীবন এ দলের জন্য উৎসর্গ করলাম।
২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে বহিস্কার করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে বহিস্কার করা হলো।
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী দমননীতির বিরুদ্ধে যিনি ছিলেন অদম্য সোচ্চার অন্যায় আর সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন রাজপথে, অলিগলিতে, তিনি সেই এটিএম কামাল। ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। জেলার প্রত্যেকটি থানাতেই তার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে অর্ধশত মামলা রয়েছে। সংগ্রামের এই দীর্ঘ সময়ে এটিএম কামাল অগনিতবার গ্রেফতার হয়েছেন। কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বহুবার রক্তাক্ত সহ গুলি আর লাঠিপেটার মুখোমুখি হয়েছেন।
অকুতোভয় এটিএম কামাল নিজের জীবন ও পরিবারকে উপেক্ষা করে বিএনপির কঠোর দুঃসময়ে দলের স্বার্থে কাফনের কাপড় গায়ে পেচিয়ে নেমে পড়েছেন রাজপথে। এই অদম্য মনোভাবের জন্যই দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার নিকট তিনি অনন্য স্থান লাভ করতে পেরেছিলেন। এটিএম কামাল কারাগারে বন্দি অবস্থায় পরিবারের খোজখবর নেয়া সহ আইনী সহযোগীতার ব্যবস্থাও করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
এটিএম কামাল গত ১৬ বছরে পর্যায়ক্রমে জেল খেটেছেন প্রায় ৩ বছর। ২০১৮ এর জাতীয় নির্বাচনের সময় বাড়ীতে এসে এটিএম কামালকে না পেয়ে যৌথবাহিনী তার একমাত্র ছেলেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
ওয়ান এলেভেন পরবর্তি তৎকালিন সেনা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে জীবনের ঝুকি নিয়ে দল ও জিয়া পরিবারের চরম দুঃসময়ে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো'কে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে ২০০৮ সালের ২১ আগষ্ট শহরের জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এটিএম কামাল আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। সেই সময় তার এই আমরন অনশন কর্মসূচি চলে টানা ১২ দিন ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তার এই আমরন অনশন বাংলাদেশের ইতিহাসে কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে।
এছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর এটিএম কামাল কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনে নামেন।
২০১২ সালের ১৭ মে বিএনপির ডাকা হরতালের দিন নগর বিএনপি’র একটি মিছিলে অতর্কিত ভাবে পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটার শিকার হয়েছিলেন এটিএম কামাল।
২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে শামীম ওসমানের ঘনিষ্টজন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আনিসুর রহমান দিপু ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা আদালত চত্বরে এটিএম কামালকে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করেছিলেন।
থানা থেকে এটিএম কামালকে যেখানে দেখা যাবে সেখানেই তাকে সরাসরি গুলি করার নির্দেশও ছিল সে সময়। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী পুলিশের তালিকায় কামাল সবসময় ছিলেন ‘মোষ্ট ওয়ান্টেট’।
প্রাচ্যের ড্যান্ডি নারায়ণগঞ্জের মাটি ও মানুষের সুখে-দুঃখে নিজেকে একাকার করে ফেলেছিলেন এটিএম কামাল। নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য সফল রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের দাবিতে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে একটি সফল আন্দোলনের নেতৃত্বও দেন এটিএম কামাল। ১/১১ এ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও মরহুম আরাফাত রহমান কোকো’র মুক্তির দাবিতে টানা ১২দিন অনশন, রাজউকের গ্রাস থেকে নারায়ণগঞ্জ ও ফতুল্লার ভূমি রক্ষার দাবীতে অনশন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঢাকার মুক্তাঙ্গন থেকে ১১ দিনে সাড়ে তিনশত কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সিলেট জকিগঞ্জের অমলসিদ সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মোহনা ত্রিগঙ্গা পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এবং খুনীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়ার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অনশন, সুন্দরবন বাঁচাও-বাংলাদেশ বাঁচাও ‘‘রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে নাও!’’ এই স্লোগানে রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যূৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ থেকে ৬ দিনে ২২৫ কিলোটিমার পথ হেঁটে রামপাল ফয়লাহাট পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য।
সর্বশেষ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকারের প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্ব পালন করায় দল থেকে বহিষ্কৃত হন এটিএম কামাল।



-20251126171839.jpg)




































আপনার মতামত লিখুন :