News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২

কিং মেকারের রুচির দুর্ভিক্ষ


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৫, ১০:১৬ পিএম কিং মেকারের রুচির দুর্ভিক্ষ

নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন কিং মেকার হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। নারায়ণগঞ্জের সকল রাজনৈতিক নেতাদের মাঝেই তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেই সাথে তাকে সকলেই রাজনৈতিক মরুব্বি হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকেন। কিন্তু এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন তার রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন মহল তার রুচির দুর্ভিক্ষ হিসেবেই বিবেচনা করছেন।

জানা যায়, এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন মোহাম্মদ আলী। সেই সাথে তিনি বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তার বিএনপি দলীয় মনোনয়ন মিলেনি। ফলে তিনি স্বতন্ত্রভাবেই বেশ জোরেশোরে আলোচনায় ছিলেন। সে হিসেবেই নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের ভোটাররা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন।

কিন্তু মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি নামে অখ্যাত একটি দল থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। যে দলের প্রধানকে নারায়ণগঞ্জবাসী একজন ধূর্তবাজ লোক হিসেবে চিনে থাকে। আর সেই দলের পক্ষ থেকেই মোহাম্মদ আলী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন। যা তার ব্যক্তিত্বের সাথে একেবারেই মানানসই না। আর তার এই বিষয়টিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের ভোটারা রুচির দুর্ভিক্ষ হিসেবেই বিবেচনা করছেন।

জনশ্রুতি রয়েছে- সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ, অরাজনৈতিক শ্রমিক সংগঠন, এমন কি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ক্লাব, সমিতির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনেও প্রার্থীদের জন্য মোহাম্মদ আলী আর্শিবাদ হিসেবে কাজ করে থাকেন। তার আর্শিবাদ পেলে যে কোন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে জয়ী হওয়া সহজ হয়ে যায়।

এর আগে আশির দশকে ব্যবসায়ী নেতা থেকে এমপি হওয়ার প্রত্যাশায় জাতীয় পার্টির চেয়াম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরে জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। প্রয়াত হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ তৎকালীন সময়ে স্বৈরাচারের খেতাব প্রাপ্ত হয়ে ক্ষমতা হারানোর পর ১৯৯১ সালর ২৭ জানুয়ারী সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসন (ফতুল্লা- সিদ্ধিরগঞ্জ) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। সে সময় ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষের মুখে মুখে মোহাম্মদ আলীর স্লোগান থাকলেও নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম।

আওয়ামীলীগের প্রার্থী ফুটবলার আশরাফ উদ্দীন আহম্মেদ চুন্নুর থেকে কম ভোট পেয়ে নীরব ভুমিকা পালন করেছিলেন মোহাম্মদ আলী। পরে ক্ষমতাসীন দল বিএনপিতে যোগ দেয়ার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন এই নেতা। তৎকালীন সময়ে জেলা বিএনপির সভাপতি রোকন উদ্দীন মোল্লা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মাজেদুল ইসলামের রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে কোনঠাসা হয়ে পড়েন জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম। উপায় না দেখে স্বরনাপন্ন হন ভাগিনা মোহাম্মদ আলীর। তৈরী হয়ে যায় বিএনপিতে যোগ দেয়ার রাস্তা।

১৯৯৫ সালে ফতুল্লা ডি আই টি মাঠে বিশাল সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে এনে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন তিনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর বিএনপির এক তরফা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এমপি হন মোহাম্মদ আলী। সংসদের মেয়াদ ১৭ দিনের হলেও সংসদ সদস্যের চিরস্থায়ী খেতাব অর্জন করেন মোহাম্মদ আলী। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে ঋন খেলাপীর দায়ে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও হয়ে ওঠেন স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা।

২০০১ সালে নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া সফর আলী ভূইয়া। সে সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর কারিশমায় নির্বাচনের ২৩ দিন আগে মনোনয়ন ভাগিয়ে দেন সদ্য বিএনপিতে যোগ দেয়া কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান সাংসদ একেএম শামীম ওসমানকে পরাজিত করেন গিয়াস উদ্দিন।

নির্বাচন পরবর্তী সময়ে স্থানীয় শিল্পাঞ্চল থেকে আহরনকৃত আয়ের ভাগ বাটোয়ার সংক্রান্ত বিরোধের কারনে সম্পর্ক নষ্ট হয় মোহাম্মদ আলী ও গিয়াসউদ্দিনের। তখন রাজনৈতিক ভাবে নিস্ক্রীয় হয়ে পড়েন মোহাম্মদ আলী। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ- সভাপতি থাকাকালীন ওয়ান ইলেভেন মঈনুদ্দিন ফখরুদ্দীন সরকারের স্বপ্নদ্রষ্টার খেতাবও অর্জন করেছিলেন এই মুরুব্বী নেতা।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনে কল্যান পার্টির কোষাধ্যক্ষ শিল্পপতি শাহ আলমকে বিএনপির মনোনয়ন এনে দিয়ে আবারও চালকের আসনে বসেন তিনি। নির্বাচনের মাঝ পথে ব্যয় সংক্রান্ত জটিলতায় কিছুটা অভিমানে শাহ আলমের কাছ সরে যান তিনি। নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চিত্রনায়িকা সারাহ্ বেগম কবরীর নিকট পরাজিত হন শাহ আলম। তার পরেই কিং মেকারের খেতাব অর্জন করেন মুরুব্বী নেতা মোহাম্মদ আলী।

সে থেকে আজ পর্যন্ত নেতা বানানোর কারিগর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মোহাম্মদ আলী। আর তাই নারয়াণগঞ্জের রাজনীতিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে যোগ্য অভিভাবক হিসেবে ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করেছেন মোহাম্মদ আলী। সবশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের মুরুব্বী হিসেবে কাজ করেন তিনি। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের অপকর্মের দায়ভার তার উপড় বর্তালেও মোহাম্মদ আলী বেশ ভালো অবস্থানেই ছিলেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় তার অবস্থান যেন দিন দিন নিম্নমুখী হয়ে যাচ্ছে। তিনি যেন তার কিং মেকারের অবস্থান বিলীন করে দিচ্ছেন।

Ad Placement 1
Ad Placement 2
Islam's Group