News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২

‘রানা মুজিব’ নির্যাতিত সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি, ছেলের আবেগময় কথা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | জারাফ রহমান প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০৫:৪৫ পিএম ‘রানা মুজিব’ নির্যাতিত সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি, ছেলের আবেগময় কথা

আজকে বিবিসি বাংলায় প্রচারিত জনাব তারেক রহমানের এর ৪৪ মিনিটের সাক্ষাৎকার শুনতে যেই আমার এই ছোট্ট ২৩ বছরের জীবনে কমপক্ষে হাজারখানিক বিভীষিকাময় রাতের কথা বারংবার মনে পড়ে গিয়েছে। আর এই মনে করবার জন্যেই হোক, অথবা তার কথা বলার ধরনেরর জন্যেই হোক, প্রতিটা মুহূর্তে পতিত স্বৈরাচারের প্রতি আমার যে ক্ষোভ আর ঘৃণা, সেটার প্রতিফলনই দেখতে পেয়েছি আমার শরীরের প্রতিটা লোম দাঁড়ানোর মধ্যে।

আমার বাবা মজিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে রানা মুজিব নামেই পরিচিত; যিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের একসময়ে যুগ্ম আহ্বায়ক এর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ কৃষকদলের সভাপতিত্ব করছেন। পদপদবী আসলে এখানে মুখ্য বিষয় না, যা মুখ্য বিষয় সেটা হচ্ছে আমার পরিবারের গত ১৭ বছরে ফেস করা প্রতিটা অন্যায় জুলুম আর নির্ঘুম রাত্রি যাপন।

তারেক রহমান যখন বলছিলেন তার রাজনৈতিক অঙ্গনে বেড়ে উঠা আর বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের হাল ধরার কথা এবং কিভাবে তাকে ১/১১ এর সময় অত্যাচার করার মাধ্যমে প্রবাস জীবন মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছিল, আমার কানে আর চোখে শুধু ভাসতেছিল আমার বাবাকে পেটোয়া বাহিনী দ্বারা নির্যাতনের দুঃসহ স্মৃতি। আমি খুবই গর্ব করে বলতে পারি ১/১১ এর পরে স্বৈরাচারের গঠন করা ভঙ্গুর রাষ্ট্রের প্রথম থেকেই প্রত্যেক অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আমার বাবা ছিল নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সম্মুখ সারির চেহারাগুলোর একজন। অবশ্য এজন্যেই হয়তো জন্মের পর থেকেই আমি এতবেশি বাবার অনুপস্থিতে বড় হতে বাধ্য হয়েছি।

এ পর্যন্ত বাবাকে প্রায় ৬-৭ বার কারাবরণ করতে হয়েছে, যেটা আসলে বিএনপির অনুগত প্রত্যেক নেতাকর্মীকেই করতে হয়েছে। তবে আমার বাবার ক্ষেত্রে আমার দেখা সব চাইতে বিচ্ছিরি আর ক্রোধের সব চাইতে নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১৩ এর চুরির নির্বাচনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে যেয়ে আমার বাবার উপর হওয়া অমানবিক নির্যাতন।

২০১৪/২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জে হরতাল এ অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, এবং সেখানেই তাকে সিলিং এর সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে করা হয় অমানবিক নির্যাতন যেখানে তার মাথা ফাঠানো হয়, হাত এর আঙুল ভাঙা হয়, সাথে ভাঙা হয় হাতের কব্জি, যেটার ক্ষত আমার বাবা কিছুদিন আগে হওয়া ওপেন-হার্ট সার্জারিতেও বহন করতে বাধ্য হন।

সেদিন আমার আম্মুকে হঠাৎ ১২ টার দিকে ফোন দিয়ে জানানো হয়েছিল যে বাবাকে গ্রেফতার করে চালান করে দেয়া হয়েছে জেলে, কিন্তু জানানো হয়নি বাবার উপর যে ক্ষোভ ঝাড়া হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের তখনকার মাফিয়াদের নির্দেশেই। দেখা করতে দেয়া হয়নি আমাদের দিনের পর দিন, অজ্ঞতাতেই থাকতে হয়েছে প্রায় ২-৩ সপ্তাহ।

অনেক তদবির করে যখন শেষমেশ দেখা পাই জেলের ভিতর, তখন বাবার চেহারা দেখে ১৩ বছর বয়সী আমি কান্না ধরে রাখতে পারি নাই। আমার এখনও চোখে ভাসে বাবার সেদিনের চেহারা, যেই চেহারাতে ছিলো কাটার দাগ, মাথা জুড়ে করা ব্যাণ্ডেজ আর হাতে পড়ানো প্লাস্টার।

তবে আমাদের জীবনে এসবই শেষ ছিলো না। আমার ছোট থেকে বেড়ে উঠার মধ্যে একটা বিষয় ছিলো কমন। সেটা হচ্ছে প্রতিটা রাতে একটা শঙ্কার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া যে কবে, কোন রাতে হঠাৎ করে পুলিশ এসে দরজায় ঠকঠক করে আমার বাবাকে আবারও গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। সবচাইতে বেশি ভয়ে থাকতাম যখন ২০১৬-১৯ সালের মধ্যে অতিরিক্ত গুম-খুনের ঘটনা ঘটতে থাকে; আর বাবা যেহেতু নারায়ণগঞ্জ এর চেনা মুখের একজন ছিলেন আর মামলা ছিলো ওয়ারেন্ট সহ ৩৫-৪০ টার উপরে, ভয় ছিলো আরও অনেক বেশি। এই একটা কারণে মাসের পর মাস বাবাকে থাকতে হয়েছে পলাতক আর পরিবার থেকে দূরে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ বাবার সাথে যোগাযোগ করতে পারতাম না ফোন ট্র্যাকিংয়ের ভয়ে।

এগুলো আসলে গত ১৭ বছরে ফেস করা অনেক শত হাজার ঘটনার মধ্যে শুধু মাত্র কয়েকটা। প্রতিবার জেলে গেলেই ৩-৪ মাসের জন্যে আটকে যাওয়া, অভাব-অনটনে বড় হওয়া, এরপরও আল্লাহর রহমতে যোগ্যতার ভিত্তিতে জীবনের পথপরিক্রমায় এগিয়ে আসা, সবই ছিলো বিটার-সুইট “কাহিনি।

এজন্যেই আসলে যখন ২৪ এর পরে অনেককেই বিএনপিকে গালি দিতে শুনি (যেটা অনেক ক্ষেত্রে যথার্থ কারণ জনগণের দুর্ভোগ হবে, সেটা বিএনপি থেকে এক্সপেক্টেড না), তখন ইচ্ছা করে গত ১৭ বছরের একটা চলচ্চিত্র বানায়ে তাদেরকে দেখাতে বসায় দেয়া, এরপরও যদি তারা গালি দেয়ার আগে একটাবার ভাবে!

যাইহোক, আল্লাহ দেখেন, এবং দেখেন এবং দেখেন, আর যখন অতিরিক্ত হয়ে যায়, তিনি ছেড়ে দেন না। পতিত স্বৈরাচারকেও তিনি ছাড়েননি, তবে, তারেক রহমানের কথা অনুসারে স্বৈরাচারের দোসরদের দেখার অনেক কিছুই বাকি আছে এবং ওরা সব দেখবে ইনশাল্লাহ যদি জনগণ বিএনপিকে নির্বাচিত করে।

এইতো, ৪৪ মিনিটের নাতিদীর্ঘ একটা ভিডিও দেখতে যেয়ে এভাবেই দুঃসহস্মৃতিচারণ হয়ে যায় আরকি

Islam's Group