মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে প্রস্তুতি সভায় ‘জয় বাংলা’ বলে বেকায়দা পড়ে যান সাবেক এমপি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী। ওই সময়ে নিজ দলের নেতা ও এক শিল্পপতি নজরে পড়ায় পরবর্তিতে ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসনের মহান স্বাধীনতা দিবসে অংশগ্রহণ করতে পারেনি মাষ্টারমাইন্ড খ্যাত মোহাম্মদ আলী। প্রায় সাড়ে চার মাস চুপ থাকার মোহাম্মদ আলী চলতি বছরে এফবিসিসিআই নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হতে সারাদেশে ব্যবসায়ীদের চাপে পড়েন। গত ৯ জুন রাজধানীর ডিওএইচএসস্থ মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে ছিল সীমিত পরিসরে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। ভক্তদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ আলী বলেন, সবাই আমাকে ক্যান্ডিডেট হতে বলছেন। কিন্তু আমার আরো কিছু অভিভাবক ও শুভাকাঙ্খী আছেন তাদের সম্মতিও আমাকে নিতে হবে। আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এ সময় সবাই একযোগে করতালী দেন। ‘মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আলী’ বলে শ্লোগান দেন।
এর ফাঁকেই গত ৯ আগষ্ট বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধ সংসদ নারায়ণগঞ্জ ইউনিটের কমান্ডের নতুন ১১ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটির আহবায়ক হন তিনি। এতে আবারো নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের স্বস্তি ফিরে আসলেও বিএনপি একাংশ নেতাদের মধ্যে ঘা জলে উঠে।
অন্যদিকে এফবিসিসিআই’র নির্বাচন গত ৭ সেপ্টেম্বর হওয়ার ঘোষণা থাকলেও আরো ৪৫ দিন পর ঘোষণা করা হয়। যার কারণে মোহাম্মদ আলী নেতৃত্বে সারাদেশে চেম্বার ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সাথে মতবিনিময় সভায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। সবঠিক থাকলে এবার এফবিসিসিআই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার পথে রয়েছেন মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে প্যানেল।
জানা গেছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট কয়লা আমদানীকারক গ্রুপ, সিলেট বিভাগ ইট প্রস্তুতকারক গ্রুপ, ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানীকারক গ্রুপ ও বৃহত্তর সিলেট বিভাগীয় চেম্বারসমূহ সদস্যদের এক মতবিনিময় সভা করেছেন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) নির্বাচনে মোহাম্মদ আলী সমর্থিত প্যানেল। ওই সময়ে সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি হওয়া মোহাম্মদ আলীকে যথাযথ সভাপতি আসনে দেখার সকল ব্যবসায়ীরা উচ্ছাস ও সমর্থক প্রকাশ করেছেন।
২০০৭ সালে এফবিসিসিআই’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ আলী। ওই সময়ে দেশের অরাজকতা অবস্থা মধ্যে তিনি জরুরী অবস্থা জারি দাবি জানান। এর কিছুদিন পর আওয়ামীলীগ সহ সমননা দলগুলো দাবি অনুযায়ী তখনকার রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষনা করেছিলেন। যার কারণে ১/১১ সরকার নিয়ে মোহাম্মদ আলী নাম প্রচার রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হন সদস্যদের একাংশ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি পদ থেকে মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেন। পরে ১১ সেপ্টেম্বর এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদ বাতিল করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কিং মেকার হিসেবে পরিচিত এককালের বিএনপির এমপি মোহাম্মদ আলী। এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি হিসেবে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখতে পারতেন। সেই সূত্রেই নারায়ণগঞ্জে যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেপথ্য ভুমিকা রাখতেন মোহাম্মদ আলী। কারও কাছে পীর সাহেব, কারও কাছে কিং মেকার হিসেবে পরিচিত তিনি। ইউনিয়ন, উপজেলা এমনকি এমপি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ছিলো তার প্রভাব। উনার সান্নিধ্য পেলেই যেন সহজ হয়ে আসতো জয় পরাজয়। আর সেই কারণে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় না থাকলেও প্রভাব প্রতিপত্তি ছিলো ভিন্ন আকৃতিতে।
জানা যায়, 'এককালে ওসমান পরিবারের সাথে মেয়র আইভী বলয়ের দ্বন্দ্ব সমাঝোতাকারী হিসেবে কাজ করেন মোহাম্মদ আলীকে। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর তিনি অভিভাবক হিসেবে আবির্ভূত হন। চেষ্টা করেন ওসমান ও চুনকা পরিবারের মাঝে সমঝোতার। যার অংশ হিসেবে নাসিকের এক বাজেট অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান, আইভী ও মোহাম্মদ আলী ছিলেন একই মঞ্চে। এছাড়া সিটি নির্বাচনে দ্বিতীয়বার বিজয়ী হয়ে দায়িত্বগ্রহন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ আলী। সেবার আইভী তার প্রশংসা করে বলেন, 'মোহাম্মদ আলী ভাই বিগত দিনে আড়ালে অন্তরালে অনেক কাজ করেছেন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মোহাম্মদ আলী অনেক কাজ করেছেন। আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। আমার বাবার সঙ্গে ছিল তাঁর ভালো সম্পর্ক। দুই পরিবারের বাসায় যাতায়াত ছিল। মোহাম্মদ আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি অনেক সাহসী কাজ করেছেন।
শুধু আইভীর জন্যেই নয়, ২০১৪ সালের ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ নির্বাচনেও মোহাম্মদ আলী কাজ করেছেন সেলিম ওসমানের জন্য। পুরো নির্বাচন তিনি নিজ হাতে সাজান। এছাড়া ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি হতে সেলিম ওসমানকে জেতানোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল ব্যাপক।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জে বিগত দিনে বহু রাজনীতিকের উত্থান হয়েছে মোহাম্মদ আলীর হাত ধরে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই এর নির্বাচনেও কুশীলব হিসেবে কাজ করেন তিনি। ১৯৯৬ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে এমপিও হয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য। ২০০১ সালে গিয়াস উদ্দিনকে বিএনপিতে যোগদান করানো এবং মনোনয়ন নিশ্চিত করার কাজ করেন মোহাম্মদ আলী। নতুন করে শামীম ওসমান দাবী করেছেন, ভোট ঘুরিয়ে দেয়ার কাজও করেছিলেন এই কিং মেকার।








































আপনার মতামত লিখুন :