নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা এই দুটি থানা বিএনপি বহু বছর ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কখনো তৃণমূলের শক্তিশালী কর্মীসংগঠন, কখনো আবার প্রভাবশালী নেতাদের রাজনৈতিক টানাপোড়েন সব মিলিয়ে গুরুত্বের জায়গা দুটোই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভিন্ন এক চিত্র ফুটে উঠেছে। বহিষ্কার, সাংগঠনিক সংকট এবং নেতৃত্বশূন্যতার কারণে দুটি থানার রাজনীতি এখন কার্যত স্থবির। দলীয় কর্মীরা বলছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন যখন দ্বারে, তখন এমন অচলাবস্থা পুরো এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন এবং ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর বহিষ্কারের পরই নেতৃত্বশূণ্যতা তৈরি হয়েছে। দুজনই দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছিলেন। তাদের গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি শুধু কর্মসূচির সাফল্যেই নয়, তৃণমূলকে সক্রিয় রাখার ক্ষেত্রেও ছিল নির্ভরশীল। ফলে তাদের অনুপস্থিতি থানা দুটির গতিশীলতা স্পষ্টভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জে তৃণমূলের দাবি, ইকবাল হোসেনের সময়কার শোডাউন ও কর্মসূচিগুলোই দলকে মাঠে রাখত। তাকে ছাড়া সভাপতি মাজেদুল ইসলাম একাই সংগঠন চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে ফতুল্লায় রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটুর প্রধান ভরসা, অর্থনৈতিক সহায়তা থেকে শুরু করে জনবল ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত অনেক কিছুই তার ওপর নির্ভর করত। তিনিও আউট হয়ে যাওয়ার পর টিটুও কার্যত একা হয়ে পড়েছেন।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বাসচালক ও যাত্রী মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুর ঘটনায় আলোচনায় আসেন ইকবাল হোসেন। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে জেলা কমিটি তাকে বহিষ্কার করে। পরে তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপি কার্যত অচলাবস্থায় পড়েছে।
অন্যদিকে ফতুল্লার পরিস্থিতি আরও জটিল। চাঁদাবাজির অডিও ফাঁস এবং পরবর্তীতে বিমানবন্দর থেকে রিয়াদের গ্রেপ্তার দলীয় রাজনীতিকে নাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে তিনি জামিনে। তার অনুসারীরা অভিযোগ করছেন, তাকে সাজানো নাটকের মাধ্যমে মাঠের বাইরে রাখা হয়েছিল। তবে জেলা নেতাদের দাবি, এত বিতর্কের পর তার দ্রুত বহিষ্কারাদেশ তোলার সম্ভাবনা নেই।
দুটি থানার কর্মীদের অভিযোগ, এমন সংকটপূর্ণ সময়ে জেলা আহ্বায়ক কমিটি যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছে না। নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা দিশেহারা হলেও জেলা নেতারা নিজেদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা নিয়েই ব্যস্ত এমনই মন্তব্য তৃণমূলের।
সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে দলকে শক্তিতে রেখেছে। জেলা, থানা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন শাখাগুলোও ছিল সক্রিয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব কার্যক্রম স্পষ্টভাবে থমকে গেছে। অনেক কর্মীর মতে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যখন মাঠে থাকার কথা, তখন দুই থানার এই অচলাবস্থা পুরো জেলাজুড়ে বিএনপির শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে।
তৃণমূল মনে করছে, সৎ, গ্রহণযোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে দ্রুত নতুন কমিটি গঠন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। নইলে এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগুকেন্দ্রিক রাজনীতি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। বিশেষত আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হলে এই দুই থানা বিএনপি পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি থানা এখন নেতৃত্বশূন্যতা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও সাংগঠনিক দুর্বলতায় পর্যুদস্ত। বহিষ্কৃত নেতাদের অনুপস্থিতি, জেলা কমিটির নিষ্ক্রিয়তা এবং নতুন কমিটি গঠনে উদাসীনতা কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। মাঠপর্যায়ের অনেকেই বলছেন, “এভাবে আর চললে সামনে আন্দোলন তো দূরের কথা, সংগঠনই টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।” পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দ্রুত সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ও নতুন নেতৃত্বই পারে আবারও সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা বিএনপিকে মাঠে ফিরিয়ে আনতে।








































আপনার মতামত লিখুন :