News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২

নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের দ্বারাই সাংবাদিকরা নিষ্পেষিত হামলা শিকার


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের দ্বারাই সাংবাদিকরা নিষ্পেষিত হামলা শিকার

ফটোসাংবাদিক মনিরুল ইসলাম সবুজ বলেছেন, সাংবাদিকতা পেশাটা সবসময়ই ঝুকিপূর্ণ, বিশেষ করে আমরা যারা জেলা পর্যায়ে কাজ করি তাদের জন্য এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি আমরা যারা চিত্রগ্রাহক হিসেবে ছবি তুলি, চ্যানেলের ক্যামেরাপার্সনে আছি তাদের জন্য ঝুঁকিটা আরও বেশি। কারণ আমরা যেহেতু স্পটে থেকে ছবি নেই সেক্ষেত্রে আমাদের ঝুঁকিটা একটু বেশি। ২৪ এর জুলাইয়ে চরম ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছি। সেসময় আন্দোলনকারী, ছাত্রলীগ এবং পুলিশের সদস্য যারাই রাজপথে ছিলেন তাদের কেউই সাংবাদিকদের পছন্দ করতেন না। সকলের কাছে সাংবাদিকতা অবিশ্বাসের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল। মূলত কোনো পক্ষই সাংবাদিকদের বিশ্বাস করেনি। বিশেষ করে আমরা যারা ফটো সাংবাদিক হিসেবে মাঠে ছিলাম তারা রোশনালে পড়েছি। 

তিনি বলেন, আন্দোলন চলাকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জে সংঘাতটা শুরু হয় ১৮ জুলাই হতে। সেদিন সকালে ফারহানা মুনার নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জের ২নম্বর রেলগেট এলাকায় ছাত্ররা অবস্থান করে। তখন আমি তাদের কিছু ছবি তুলে সাইনবোর্ডের উদ্দেশ্য চলে যাই। খবর পেয়েছিলাম পুলিশ সাইনবোর্ডে একটা যুদ্ধের মত অবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছিল। কিন্তু সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা দেখে পুনরায় চাষাঢ়ায় পৌঁছাই। চাষাঢ়ায় এসে দেখতে পেলাম রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ওইসময় আমি আমার কাজ করি এবং দেখলাম প্রায় ১১ টার সময়ে ছাত্রলীগ এবং পুলিশ সশস্ত্র অবস্থায় আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিচ্ছে। আমি সেই ঘটনার ছবি তুলি। সকাল পেড়িয়ে দুপুর হলে আমি জুবায়ের নামের একটা ছেলেকে জয়নাল ট্রেডস এন্ড সেন্টারে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলেটা বাচার আকুতি জানালে আমি তাকে নিয়ে খানপুর হাসপাতালে ছুটে যাই। পরবর্তীতে ছেলেটিকে রেখে সাড়ে তিনটার সময়ে চাষাঢ়ায় এসে দেখি আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। সেসময় আমি সংঘর্ষের ছবি তোলার চেষ্টা করা মাত্রই ছাত্রলীগ আমাকে ঘিরে ফেলে বেধড়ক মারধর শুরু করে। তখন হামলাকারীরা আমার ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করলে আমি কৌশলে ক্যামেরা হতে মেমোরিটা নিয়ে নেই। এরপর তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে তাদের মধ্যের দুইজন এসএস পাইপ দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি দেয়। এতে গুরুতর আহত হয়ে যাই। একপর্যায়ে আন্দোলনরত ছাত্ররা আমাকে উদ্ধার করে।

৫ আগস্টের আগের এবং বর্তমানের সাংবাদিকতা নিয়ে সবুজ বলে, মূলত বাংলাদেশে সাংবাদিকতার পরিবেশটা আগেও ছিল না আর এখনো নাই। ছাত্র আন্দোলনটা শুধুমাত্র সরকার পতনের জন্য হয়নি এটা হয়েছিল একটা পরিবর্তনের জন্য। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বিচার ব্যবস্থাসহ সব সেক্টরের জন্য হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এটা সম্ভব হয়নি। তবে,বিগত ১৬ বছরের চেয়ে এখন কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি। যেমন গাজীপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে, দুঃখের বিষয় হচ্ছে ওই একই দিন দুইজন সাংবাদিকের উপর হামলা হয় যা পুলিশের উপস্থিতিতে। এসমস্ত জায়গায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা বলা যাবে না এগুলো হলো আশকারা। থানার সামনে এমন ঘটনা ঘটে এটা কেমন কথা? এককথায় ৫ আগস্টের পরে আন্দোলনকারীরা এবং আমরা যা চেয়েছিলাম তা পূরন হয়নি। আমরা আশাহত হয়েছি। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে এবং এর পাশাপাশি রাজনীতিবিদরা লীগের ফ্যাসিজমের পতনের পরও শিক্ষা নেয়নি। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি চলছেই যার তথ্যের জন্য আমরা গেলে হামলা শিকার হই। অথচ আওয়ামী লীগ আমালে আমাদের উপর মামলা হতো, পুলিশি হয়রানি হতাম।

সবুজ বলেছেন, সাংবাদিকতার পেশটাকে বর্তমানে বাংলাদেশের ৯০% মানুষই বাঁকা চোখে দেখেন। এই দায় আমাদের সাংবাদিকতার। আমাদের কতিপয় কিছু সাংবাদিকের। আমরা নগ্নভাবে প্রতিবহন করেছি গডফাদারদের, নগ্নভাবে ফ্যাসিস্টদের প্রতিষ্ঠিত করেছি। সুতরাং এই দায় এড়াবার উপায় নেই। তবে এরমধ্যেই অনেকে আছে যারা তাদের লিখনি এবং ছবির মাধ্যমে অনুভূতি এবং প্রতিবাদ করেছে। বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জে রাইফেল ক্লাব ভিত্তিক কিছু সাংবাদিক ছিল এবং তারা এখনো আছে,এর কোনো পরিবর্তন হইনি। নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের দ্বারাই সাংবাদিকরা বেশি নিষ্পেষিত,হামলা-মামলার শিকার হয়েছি।

১১ আগস্ট রাতে মো. আকাশের সঞ্চালনায় নিউজ নারায়ণগঞ্জের এক অনলাইন আলোচনায় সবুজ এসব কথা বলেন।

Islam's Group