News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

আন্দোলনে দুঃসময়ে বিএনপি আগলে রাখেন মান্নান


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ০২:৫৬ পিএম আন্দোলনে দুঃসময়ে বিএনপি আগলে রাখেন মান্নান

আজহারুল ইসলাম মান্নান একসময়ের বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ের গত ১৭ বছরের এক স্পন্দনের নাম। আওয়ামী লীগ শাসনামলে যখন বিএনপির এক সময়ের সুবিধাভোগীরা নিজেদের গুটিয়ে আতাঁত শুরু করে তখন মান্নান ছিলেন রাজপথে সরব। একের পর এক মামলা, হামলা, কারাভোগও তাকে রাজপথ থেকে সরাতে পারেনি। বিএনপির এক সময়ে সোনারগাঁয়ের কান্ডারী হয়ে উঠেন তিনি। রাজধানী ঢাকা প্রবেশের অন্যতম পথ মেঘনা সেতু থেকে শুরু করে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত সড়কে আন্দোলনে তিনি থাকতেন সম্মুখ সারিতে, কখনো অনুসারীরা কাঁপাতেন রাজপথ। মাঝে হাসিনা সরকারের আমলে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে কারচুপি করে পরাজয়, আরেকবার জয়ী হলেও অপসারণ করা হয় এ নেতাকে। এত কিছুর পরেও এখনো সোনারগাঁয়ের মূল ধারার বিএনপি ও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি আপন হয়েই রয়েছেন।

দীর্ঘবছর ধরে সোনারগাঁ উপজেলাটি এককভাবেই নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে আসছে। তবে এবার সোনারগাঁয়ের সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা পর্যন্ত যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসন হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। সোনারগাঁয়ের সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জকে যুক্ত করার পেছনে অদৃশ্য ৬ নেতার নাম আসলেও নেপথ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।

সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, সোনারগাঁয়ের সাথে সিদ্ধিরগঞ্জ যুক্ত করার নেপথ্যে যারা কাজ করেছে তারা দলের জন্য হুমকি স্বরুপ। তারা অবশ্যই মীরজাফর। তারা ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জের নেতাকর্মীর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। দল সোনারগাঁ থেকেই মনোনয়ন দিবে, ইনশাআল্লাহ। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমেই সাধারণ মানুষ ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করবে।

সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান বলেন, সোনারগাঁকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তারা অবশ্যই নেতা হিসেবে অযোগ্য ও দুষ্টু প্রকৃতির লোক। যোগ্য নেতা হলে সিদ্ধিরগঞ্জকে এই আসনে সংযুক্ত করার আবেদন করতে পারতো না। ব্যক্তিস্বার্থেই এমন নিন্দনীয় কাজটি করেছে। অবশ্যই সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জবাসী পক্ষ থেকে তাদেরকে ধিক্কার জানাই। তবে সিদ্ধিরগঞ্জ যুক্ত হওয়ায় এ আসনে নির্বাচনের তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা তৃণম‚ল বিএনপি অবশ্যই বিশ্বাস করি তারেক রহমান তার সিদ্ধান্ত নিতে ভ‚ল করবেন না।

সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক নুরে ইয়াসিন নোবেল বলেন, দলের ভেতরে নেতা পছন্দের ব্যাপারটি থাকতে পারে। তবে সোনারগাঁয়ের সাথে কেনো সিদ্ধিরগঞ্জকে সংযুক্ত করতে বিএনপির এ ৬ নেতা আবেদন করেছে এব্যপারটি একান্তই তাদের ব্যক্তিগত। কিন্তু কাজটি ঠিক হয়নি। আমরা আপিল করেছিলাম।

যুগ্ম আহবায়ক কাউসার আহমেদ বলেন, সোনারগাঁ বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম উপজেলা। জনসংখ্যাও বেশি। তবে যাদের আবেদনে নির্বাচন কমিশন সোনারগাঁয়ের সাথে সিদ্ধিরগঞ্জকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে যুক্ত করেছে। তারা আর যাই হোক প্রকৃত পক্ষে কোনো নেতা নয়। তারা নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে বৃহৎস্বার্থকে পা-চাপা দিয়ে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে। আমরা মনেকরি এই কুচক্রী মহলটি সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যের সাথে বেঈমানী করেছে। ইনশাআল্লাহ,। দল বিএনপির ত্যাগী নেতা সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানকেই ম‚ল্যায়ন করবে। এই বেঈমানীর জবাব সোনারগাঁবাসী অচিরেই দিবেন বলে আশা রাখি।

সোনারগাঁও উপজেলা ও সোনারগাঁও পৌর বিএনপি সহ এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মনে করছেন সোনারগাঁ উপজেলার মত বিএনপি নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নানের সক্ষমতা রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ করে তাদের আগলে রাখার।

২০১৪ সালে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন সেই কঠিন সময়ে। যে কারণে সোনারগাঁবাসী স্বপ্ন দেখছেন দলের যোগ্য ও ত্যাগী নেতা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে আজহারুল ইসলাম মান্নানকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করবে বিএনপি এবং সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জবাসী মান্নানকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাবে দুটি থানা এলাকার ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য। এর বিকল্প হিসেবে আর কাউকে দেখতে নারাজ রাজপথের নেতাকর্মীরা।

তৃণম‚ল বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর নেতাকর্মীদের নিয়ে গণতন্ত্র মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। সেই ১/১১ এর ফখরুদ্দিন মঈনউদ্দীনের আমলেও সোনারগাঁয়ের বিএনপির ঝান্ডা ধরেছিলেন। ৩২টি মামলায় জেল জুলুম ও হামলা মামলা নির্যাতনের পরেও রাজপথের আন্দোলনে বহাল ছিলেন বিএনপির এই ত্যাগী নেতা। উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও চেয়ারে বসতে পারেননি এক বছরও বিভিন্ন মামলায় দেখিয়ে বহিষ্কার করা হয়েছে ৬ বার । তবুও সরকারি দল আওয়ামীলীগ কিংবা জাতীয় পার্টির এমপির সঙ্গে আতাত করে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে থাকার চেষ্টাও করেননি রাজপথের আপোষহীন নেতা "মান্নান।"

নারায়ণগঞ্জ জেলার আরো দুটি উপজেলা পরিষদের বিএনপির দুই চেয়ারম্যান সরকারি দলের সঙ্গে মিশে চেয়ারম্যানশীপ উপভোগ করলেও মান্নানের কাছে চেয়ারম্যানির চেয়ারের চেয়েও বড় ছিল দল ও দেশ। গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে সেই চেয়ারকে তুচ্ছ ভেবে দলের নেতাকর্মীদের আগলে রেখে রাজপথে থেকেছেন তিনি। রাজপথে সক্রিয় থাকায় নিজে ও নিজের সন্তানদেরও জেল খাটতে হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের প‚র্বে মান্নানের স্কুল পড়ুয়া ছোট ছেলে সাকিবকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। অথচ সাকিব রাজনীতিতে ছিলো না। আওয়ামীলীগ সরকারের কঠোর অবস্থানে বিএনপির বিগত সময়ের তথাকথিত শীর্ষ নেতা পরিচয়দারী নিজেদের গুটিয়ে নিলেও মান্নান ছিলেন অগ্রভাগে রাজপথে।

বিগত সময়ে সোনারগাঁয়ে বিএনপির হাল ধরার মত নেতা কেউ ছিল না, একমাত্র মান্নান ছাড়া। নেতাকর্মীরা হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হলেও তাদের কোনো খোঁজ খবরও রাখেননি কেউ। নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করা, জেলখানায় খবর নেয়া, জেলখানার খরচ ব্যয় বহন, এমনকি জেলবন্ধি বা আহত নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজখবরও রেখেছেন মান্নান। এভাবে সোনারগাঁয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠেছিলেন মান্নান। শুধু নেতাকর্মীদের পাশেই থেকেছেন তা নয়, নগরীর ডিআইটি বানিজ্যিক এলাকায় জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়টি সিটি করপোরেশন থেকে নেয়ার পেছনে মান্নানের বিপুল পরিমান অর্থের অনুদান রয়েছে। যে ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে নতুন ভবন করেছে সিটি করপোরেশন।

এদিকে এসবের মাঝে মান্নান ও তার সন্তানদের জেল খাটতে হয়েছে গ্রেপ্তার হয়ে। আন্দোলন সফল করতে বছরের পর বছর ছিলেন আত্মগোপনে। মান্নানের আরেক পুত্র জেলা ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি ও জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক খায়রুল ইসলাম সজীবও জেল খেটেছেন। পৃথকভাবে ছাড়াও পিতা-পুত্র একসাথে জেল খেটেছেন।

মান্নান ও সজীব পিতা পুত্র মিলে ৬০টির বেশি রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়েছেন। ১৫ বছরে মান্নান কয়েক দফায় প্রায় ৬ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন।

সোনারগাঁবাসী বহিরাগত কোনো নেতাকে চায় না। দল মূল্যায়ন করলে আজহারুল ইসলাম মান্নান এর বিজয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

Islam's Group