জুলাই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সজীব মিয়া হত্যা মামলায় আসামী হয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্রশাসক ও বিএনপির সাবেক নেতা আব্দুল মতিন প্রধান। ২০২৪ সালের ২১ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড এলাকায় নিহত হোন সজীব। ওই ঘটনার ১৩ মাস পর ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১৫০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে আদালতের নির্দেশে মামলা গ্রহণ করেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। এই মামলায় মতিন প্রধানকে আসামী করা হয়েছে। মামলায় আসামী হওয়ার পর নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে আসছেন আওয়ামীলীগে যোগদানকারী মতিন প্রধান। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করে স্থানীয় রাজনীতির মাধ্যমে বিএনপিতে প্রবেশের চেষ্টা করে আসছিলেন তিনি।
এদিকে মামলায় আসামী হওয়ার পর তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ স্থানীয় গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে আসছেন। মতিন প্রধান বিবৃতিতে দাবি করেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগের কৃষকলীগের কোষাধ্যক্ষ পদে ছিলেন এবং একই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ছিলেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে গিয়াসউদ্দীনের সঙ্গে মতিন প্রধানও বিএনপির রাজনীতিতে যোগদান করেন। ২০০২ সালে জেলা বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হোন এবং ২০১১ সালে তিনি মহানগর কৃষকদলের আহবায়ক হোন। বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন না হওয়ার ফলে মতিন প্রধানকে প্রশাসক নিয়োগ দিলে সাত বছর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৩ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক পদে দায়িত্ব পান তিনি।
তিনি এও দাবি করেন শামীম ওসমানের চাপের কারনে তিনি বিএনপির রাজনীতি থেকে নীরব হয়ে যান। তবে তিনি যে ২০১৭ সালে শামীম ওসমানের সমাবেশে উপস্থিত হয়ে আওয়ামীলীগ সরকার আমলের দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ নেতাদের হাতে ফুলের নৌকা উপহার দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছিলেন সেটা তিনি বলেননি।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর ডিএনপি বাধ প্রকল্পের অনুমোদন করায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে সিদ্ধিরগঞ্জে কদমতলী নাভানা ভ‚ইয়া সিটি মাঠে ডিএনডির মেঘা প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় সমাবেশের আয়োজন করেন শামীম ওসমান।
সেদিন ফুলের নৌকা উপহার দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন আব্দুল মতিন প্রধান। সমাবেশে আওয়ামীলীগ সরকারের দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হাতে ফুলের নৌকা উপহার দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন মতিন প্রধান।
এসময় ওই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল হক, প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু, এমপি একেএম শামীম ওসমান, এমপি সানজিদা খানম, এমপি সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা, জাতীয়পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ হুসনে আরা বাবলী, জাতীয় শ্রমিকলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ খোকন সাহা প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত, পৌরসভা থেকে টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি এবং দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তখন দলীয় নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, মতিন প্রধান আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন। যদিও তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, এটি সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের ষড়যন্ত্র।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে দীর্ঘ সখ্যতার পর সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পালাবদলে ফের বিএনপির দিকে ঝুঁকেছেন মতিন প্রধান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলার চাপে পড়ে বিএনপির ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। বিএনপি নেতাদেরও দাবি, আওয়ামী লীগের আমলে মতিন প্রধানের কারণে অনেকেই নির্যাতন-জুলুমের শিকার হয়েছেন।
বিতর্কিত চরিত্র
রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিতর্কের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন মতিন প্রধান। কখনো বিএনপি, কখনো আওয়ামী লীগ—দল পাল্টে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার বহুরূপী চরিত্রই তাকে হত্যা মামলার আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মতিন প্রধান আসলে নারায়ণগঞ্জের সেই সব রাজনীতিবিদদের একজন, যাদের কাছে দল নয়, সুবিধাই বড়। তবে এবার তার সেই সুবিধাবাদী রাজনীতির শেষ রক্ষা হলো না।
আপনার মতামত লিখুন :