News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বিএনপির টানাপোড়েনের সুযোগে শক্ত ভিত্তিতে জামায়াত


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৫, ০৯:২৪ পিএম বিএনপির টানাপোড়েনের সুযোগে শক্ত ভিত্তিতে জামায়াত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তাপও ততই বাড়ছে। তবে এই উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে বিএনপি। নিজস্ব মনোনয়ন বণ্টন ঘিরে দলের ভেতর তৈরি হওয়া টানাপোড়েনে চারটি আসনেই যেমন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তেমনি এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বিপরীতে নীরবে নিজ অবস্থান শক্ত করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণার অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর নাম প্রকাশ করলে স্থানীয় রাজনীতিতে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মনোনীত মুস্তাফিজুর রহমান দিপু প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে পাশে নিতে সক্ষম হলেও অন্যসব আসনে যা তা অবস্থা।

সবচেয়ে আলোচিত সংকট তৈরি হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। কিন্তু দীর্ঘদিনের বিভাজনে থাকা মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুর এবং কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার এবার একজোট হয়ে তার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামেন। বিপ্লব ও সংহতি দিবসে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে বিক্ষোভ, পরে মশাল মিছিল, পাল্টা শোডাউন সব মিলিয়ে আসনটিতে দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিএনপির প্রচারণার চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধই এখন বেশি আলোচিত।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মাসুদুজ্জামান মাসুদের মনোনয়ন ঘোষণায় ক্ষোভ আরও প্রকাশ্য। সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ওসমান পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু ইউসুফ খান টিপুসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা সংবাদ সম্মেলন করেন। পক্ষবিপক্ষের অবস্থান স্পষ্ট হওয়ায় আসনটিতে দলীয় ঐক্যের কোনো পরিবেশই নেই।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মনোনীত আজহারুল ইসলাম মান্নান একটি অডিও বার্তায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। অডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর নেতাকর্মীদের মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও তার বহিষ্কারের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক মাঠ।

সব মিলিয়ে চারটি আসনেই বিএনপি এখন নিজের ভেতরের সংঘাতেই ব্যস্ত। মনোনয়ন নিয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গ, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও কেন্দ্রে চাপ বাড়ার কারণে জেলা বিএনপির সামগ্রিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে। দলীয় নেতাদের মতে, নির্বাচনী মাঠে প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ পাওয়ার আগেই অভ্যন্তরীণ সংকটই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন অস্থির প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীতে। রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার দেড় যুগ পর দলটি নারায়ণগঞ্জে নতুন করে মাঠে ফিরেছে সংগঠিত ও পরিকল্পিত কাঠামোয়। মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির মতো কোনো টানাপোড়েন নেই, বরং বছরের শুরুতেই জেলার পাঁচটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর থেকেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে বিরল এক ঐক্য। কোথাও অসন্তোষ নেই, নেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বরং প্রতিটি প্রার্থীকে ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে রাজপথের প্রচলিত রাজনৈতিক প্রদর্শনীর বদলে জামায়াত বেছে নিয়েছে ‘সামাজিক সংযোগ’-নির্ভর কৌশল। ইফতার, দোয়া মাহফিল, মানবিক সহায়তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ এসব কর্মসূচির মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি দলটির কৌশলগত রিব্র্যান্ডিং সংঘর্ষ পরিহার করে সমাজমুখী উপস্থিতির মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য ইমেজ গড়ার চেষ্টা।

যেখানে বিএনপি নিজের ঘরোয়া সংকটে নেতৃত্বের সময় ব্যয় করছে, সেখানে জামায়াত নীরবে কিন্তু সুসংগঠিতভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, নারায়ণগঞ্জের অন্তত তিনটি আসনে জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থানে যেতে পারে যা এক দশকের বেশি সময় পর তাদের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের বড় ইঙ্গিত।

নারায়ণগঞ্জের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা তাই খুব স্পষ্ট একদিকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত বিএনপি, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের বিলোপ থেকে ফিরে আসা জামায়াত ঐক্যবদ্ধ ও কৌশলগতভাবে স্থির। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দুই দলের এই বিপরীত বাস্তবতা জেলাজুড়ে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করছে।

Islam's Group