“প্রাচ্যের ডান্ডি” খ্যাত নারায়ণগঞ্জ আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। যানজট, ফুটপাত দখল, অবৈধ যানবাহনের চলাচল, এলোমেলো গাড়ি পার্কিং সবকিছু মিলিয়ে শহরজুড়ে এখন চরম অরাজকতা অবস্থা বিরাজ করছে। ২০১১ সালে শহরটি সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর শৃঙ্খলা ফেরানোর নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও দৃশ্যপট বদলায়নি তেমন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শহরের বিশৃঙ্খলা আরও প্রকট হয়। প্রাথমিকভাবে জেলা পুলিশ শহরে ইজিবাইক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পরবর্তীতে নাসিক ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে কিছুদিনের জন্য শৃঙ্খলা ফিরলেও অল্প সময়েই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে শহর। নতুন করে যুক্ত হয়েছে শহরে সিটি করপোরেশনের ড্রেন নির্মাণ। ধীরগতিতে এই কাজ চলায় একদিকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে পাশাপাশি যানজটও বাড়িয়েছে।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ফুটপাতজুড়ে হকারদের দখল বেড়েছে ভয়াবহভাবে। ফলে পথচারীদের চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের একাধিক অভিযানের পরও হকাররা আবার ফিরে আসে। গত বছরের ২৫ নভেম্বর হকার উচ্ছেদের পর ফুটপাতে বসার দাবিতে শহরমুখী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে হকার সংগঠনগুলো। আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা হকার্স সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ ও মহানগর হকার্স লীগের সভাপতি রহিম মুন্সী।
হকার ইস্যু নারায়ণগঞ্জে নতুন নয়। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারিতে এ নিয়েই সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন মেয়র ডা. আইভীসহ প্রায় অর্ধশত মানুষ। প্রকাশ্যে গুলি, ইটপাটকেল ছোড়া সব মিলিয়ে শহরজুড়ে তৈরি হয়েছিল আতঙ্কের পরিবেশ। পরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও হকার সংগঠনগুলোর যৌথ সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসা নিষিদ্ধ করা হয়। তবুও সেই সিদ্ধান্ত আজও কাগজেই সীমাবদ্ধ।
এদিকে শহরের রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অবৈধ পার্কিং, রাস্তায় পণ্য লোড-আনলোড বন্ধে প্রশাসনের মাইকিং ও অভিযানও ফলপ্রসূ হয়নি। গত ১৪ নভেম্বর জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে অনুমতিহীন বেশ কয়েকটি যানবাহন জব্দ ও জরিমানা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছোট এই শহরে রেজিস্ট্রিকৃত বাস রয়েছে ২৮৩টি। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর নতুন করে চালু হয়েছে আরও তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহন সার্ভিস, যাদের বাস সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। এর বাইরে আরও অসংখ্য অনুমতিহীন বাস শহরে নিয়মিত চলাচল করছে। পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, লেগুনা, ট্রাক ও ট্রাক্টরের চলাচল শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অচল করে দিয়েছে।
মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এখন লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শহরে পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে গাড়ি থামিয়ে রাখা হয়। অনেক মার্কেটের নিচতলায় পার্কিংয়ের জায়গা থাকলেও সেগুলো দোকান ও রেস্টুরেন্টে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে প্রধান সড়কেই গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে নির্বিঘ্নে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, শহরে বৈধ ইজারা দেওয়া স্ট্যান্ড মাত্র পাঁচটি। কিন্তু বাস্তবে অবৈধ স্ট্যান্ডের সংখ্যা অনেক বেশি শুধু চাষাঢ়া এলাকায়ই আছে কমপক্ষে আটটি অবৈধ স্ট্যান্ড। বঙ্গবন্ধু সড়ক, রাইফেল ক্লাব মোড়, নূর মসজিদ মোড়, পপুলার পয়েন্ট, দিগুবাবুর বাজার রোড ও নিতাইগঞ্জ মোড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে এই অবৈধ স্ট্যান্ড ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে। এর ফলে শহরবাসীর জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। যার কোনো সমাধান আজও কেউ করতে পারে নি।








































আপনার মতামত লিখুন :