নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বিরোধীদের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য যেন গাঁয়ে মাখছেন না নারায়ণগঞ্জ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। তাদের নিরব ভূমিকায় যেন প্রতিপক্ষের জন্য জবাব হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। সেই সাথে জবাব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনকল্যাণমূলক কাজের মধ্য দিয়ে জনসাধারণের মাঝে জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
সূত্র বলছে, বিগত প্রায় ১৬ বছর ধরেই ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও জামায়াত ইসলামী নেতাকর্মীরা বিভিন্নিভাবে অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করতে পারতেন না। সেই সাথে তারা বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে মিলেই আন্দোলন সংগ্রামে সরব ছিলেন।
এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই নিরবে কাজ করে যেতে থাকেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখা। বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্ম নিয়ে তারা জনসাধারণের মাঝে উপস্থিত হচ্ছেন।
তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধীতা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে জামায়াতের বিরুদ্ধে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
সবশেষ গত ২৪ অক্টোবর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মতবিনিময় সভা ও সুধী সমাবেশের আয়োজন করে মানবতা সেবা কল্যাণ কাশেমী পরিষদ। আর এই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক ইসলামী দলের প্রার্থী জান্নাতের টিকিট দেয়। কেউ কেউ আবার রোজা ও পূজা এক করে ফেলে, কেউ কেউ গিয়ে মন্দিরে গীতা পাঠও করে।
তিনি আরও বলেন, পাল্লা ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক। কিন্তু সেই পাল্লাতেই আবার নিচ দিয়ে বাটখারা দিয়ে ১ কেজির স্থলে ৮০০ গ্রামের ফল দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। পাল্লা আমরা পছন্দ করি, কিন্তু ৮০০ গ্রামের পাল্লাকে সাপোর্ট করি না। আমরা ইসলামকে সাপোর্ট করি ইসলাম আমার প্রাণের স্পন্দন, ইসলামের জন্য মরতেও পারি। কিন্তু সেই ইসলাম হতে হবে মদীনার ইসলাম, সেটা জামায়াতে ইসলাম না। আমরা ৮০০ গ্রামের জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করি না, তাদের ভোট দেওয়াও জায়েজ না।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর বিকেলে শহরের ১৪নং ওয়ার্ড এলাকায় বিএনপির কর্মী সভার আয়োজন করা হয়। আর এই কর্মী সভায় প্রধান অতিথিরবক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষোদগার করা হচ্ছে, আমি বলতে চাই আমরা যারা মুসলমান আছি, এটা শুধু মুসলমানের দেশ না। এখানে হিন্দু আছে, বৌদ্ধ আছে খ্রিস্টান আছে। সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার। আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নাই, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক।
সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমরা ওই জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, জামায়াতে ইসলামী আমাদের হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (স.) এর ইসলামে বিশ্বাস করে না। তাদের একজন ভন্ড নবী আছে তারা যেটা বিশ্বাস করে। সে হলো আবু আলা মওদুদী। সেই মওদুদী বিভিন্ন এনজিও, পশ্চিমা বিভিন্ন শাসক গোষ্ঠির ইন্ধনে ইসলামকে ভিন্ন পথে প্রবাহিত করার জন্য তারা ইসলামকে ব্যবহার করছে। আমরা বলতে চাই আমরা জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাইনা। কিন্তু যদি আমাদের মুখ খুলাতে চান, আপনারা এই বাংলাদেশে রাজনীতির নামে অনেকের রগ কেটেছেন। অনেককে হত্যা করেছেন। হত্যা খুন গুমের সাথে আপনারা জড়িত। সুতরাং আমরা সেটি বলতে চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল সুস্থ ধারার রাজনীতি করুক।
এসকল বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর আবদুল জব্বার বলেন, আমরা কারও রগ কেটেছি উনার কাছে প্রমাণ থাকলে সেটা বলুক। আমরা জানি না উনি কি প্রমাণের ভিত্তিতে এসব কথা বলছেন। আমার কাছে মনে তিনি আলোচনায় আসার জন্যই এসব কথা বলছেন। কেউ আলোচনায় আসতে চাইলে এসব কথা বলে থাকেন; যেন আমরা তাকে নিয়ে কথা বলি। মুফতি মনির হোসেন কাসেমী সাহেবও একই কাজটি করছেন।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই পলিসি করে থাকেন আমি আলোচনায় কিভাবে আসবো? এটা আলোচনায় আসার জন্য একটা কৌশল হতে পারে। তবে সত্য মিথ্যা আসল নকল এটা জনগণ জানে। এজন্য আমরা এসব বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আমাকে কেউ গালি দিলে আমরা গালি দিবো না। এটা আমাদের পলিসি না। আমাদের পলিসি কেউ আমাকে গালি দিলে আমরা সুন্দর ব্যবহার করবো। এটা আমাদের সংগঠনের পদ্ধতি।
আবদুল জব্বার বলেন, আমরা যেহেতু ইসলামকে অনুসরণ করি এটা ইসলামেরও পদ্ধতি। তারা নিজেদের ভুল নিজেরা উপলব্দি করুক। আমাদের কিছু বলার নেই। তবে তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক এত খারাপ হয়নি এভাবে আমাদের বিরুদ্ধে বলতে হবে। তারা কোন ভিত্তিতে কোন কারণে বলেছেন উনারাই ভালো বলতে পারবেন।








































আপনার মতামত লিখুন :